এবার চিরচেনা ক্যানভাস থেকে বের হয়ে কাঠ কেটে-ছেঁটে, খোদাই ও উৎকীর্ণ করে নানা আকার-আকৃতির সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন করে শিল্পভাষা দিলেন এ শিল্পী। তুলে আনলেন বাংলা, বাঙালির ইতিহাস।
প্রবীণ এ চিত্রশিল্পীর সেসব শিল্পকর্ম নিয়ে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে শুরু হয়েছে ২৭ দিনব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী 'জোড়াতালির চালচিত্র'।
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পীর ৭১টি শিল্পকর্ম। কাঠ, ইস্পাত, নল, কাগজ ও রং ব্যবহার করে তিনি তৈরি করেছেন ভিন্নধর্মী সব শিল্পকর্ম। কাঠের পটভূমিতে বহুমাত্রিক সব নকশা অসামান্য দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। মৃত বৃক্ষকাণ্ডের বুকে তিনি প্রাণসঞ্চার করে মূর্ত করেছেন বিচিত্র সব দৃশ্যপট আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। অন্যদিকে অ্যাক্রিলিকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন বর্ণিল সব দৃশ্যকল্প।
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, শিল্পী হাশেম খান কাঠ দিয়ে গড়েছেন বৈচিত্র্যময় ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম। এতে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
পরিপক্ব সেগুন কাঠের গুঁড়িতে এক অভূতপূর্ব শিল্পচিন্তা। কাঠের সঙ্গে ইস্পাত নল, কাগজ আর ইচ্ছেমতো নানা রঙের মিশেলে তৈরি করেছেন কাঠ-চিত্র, কাঠ-ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও চিত্র।
কাঠের তক্তা কেটে-ছেঁটে, খোদাই করে নানা আকৃতির সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্যের শিল্পভাষায় তিনি তুলে এনেছেন বাঙালির ইতিহাস। কাঠের ভাস্কর্যে মূর্ত হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। উঠে এসেছে ছয় দফার প্রতীকী চিত্র। প্রদর্শনীতে ক্যানভাস কাগজ-বোর্ড রঙের প্রলেপ মিলিয়ে আছে কোলাজও।
একজন সফল চিত্রকর হয়েও এ প্রদর্শনীতে নিজের রংতুলি ক্যানভাসের জগৎ ছেড়ে নতুন মাত্রা জুড়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে শিল্পী হাসেম খান জানান, শিল্পীরা নিজের একটা পথ, একটা ধারা পেয়ে গেলে চোখ বন্ধ করে চলতেই থাকে সারাটা জীবন। আমি সব সময় প্রথা ভাঙার সাহস করি। নতুন এই কাঠের ঝোলানো ও মাটিতে দাঁড়ানো ভাস্কর্যগুলো তৈরিতে কষ্ট হয়েছে, তবে আনন্দও খুব পেয়েছি। এক নতুন দেশে বেড়াতে গেলে যেমন শঙ্কা থাকলেও এক সময় আনন্দে মগ্ন হয়ে যায় ঠিক তেমনি হয়েছে।
প্রদর্শনী সম্পর্কে সাহিত্য-শিল্পকলার সমঝদার বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, আমি নতজানু হই শিল্পী হাশেম খানের কাছে, মুগ্ধ হই বারবার, তার এই গাছগাছালির কাঠশিল্প দেখে। কাঠের মধ্যে যে কত ভালোবাসা আছে তা তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত। নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শুক্র থেকে বুধবার উন্মুক্ত সবার জন্য। চলবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
এইচএমএস/এএ