ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করছেন তরুণ লেখকরা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করছেন তরুণ লেখকরা

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ফেসবুক আর অন্যান্য প্রযুক্তিগত মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লেও গ্রন্থমেলায় সবসময়ই বিশেষ আলোচনায় থাকে তরুণ লেখকদের বই। এরই ধারাবাহিকতায় দিনে দিনে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখকরা আসছেন, তেমনি গত কয়েক বছরেও নিজেদের অবস্থান বেশ উচ্চে নিয়েছেন কয়েকজন তরুণ লেখক। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করছেন তারা।

শুধু গৎবাধা লেখনী নয়, তারা লিখছেন বিভিন্ন বিচিত্র বিষয়ের উপরেও। এর মধ্যে ক্যারিয়ার, অনুবাদ, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও উদ্দীপনামূলক বিষয় নিয়ে লেখা রয়েছে।

মেলায় তাদের বইগুলো বিক্রিও হচ্ছে বেশ। তবে এসবের বাইরে তরুণ ও নতুন লেখকদের আরেকটি চিত্রও আছে। সেটি হল অনেক তরুণ লিখছেন, বই প্রকাশ করছেন যাদের লেখা, বাক্যগঠনসহ নানা বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে।

গত কয়েক বছরে তরুণ লেখকদের মধ্যে নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন স্বকৃত নোমান। এবার মেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে অন্যপ্রকাশ থেকে উপন্যাস ‘মায়ামুকুট’ এবং পাঞ্জেরী থেকে প্রবন্ধের বই ‘আঠারো দুয়ার খুলে’ প্রকাশিত হয়েছে। স্বকৃত নোমান বলেন, পাঠকদের সব সময় নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে লিখি। বিষয়, ভাষা চূড়ান্ত না হলে লিখি না।

খ্যাতিমান তরুণ কবি পিয়াস মজিদের সাতটি নতুন বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি বই ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। মেলায় তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে দুটি কাব্যগ্রন্থ- ‘ক্ষুধা ও রেস্তোরাঁর প্রতিবেশি’ (প্রথমা) ও ‘প্রেমপিয়ানো’ (পাঞ্জেরী), দুটি প্রবন্ধের বই ‘জীবনানন্দ: আমার অসুখ ও আরোগ্য’ (ঐতিহ্য) ও ‘বঙ্গবন্ধুর বয়ানে সাহিত্য ও অন্যান্য’ (পার্ল), সাক্ষাৎকার সংকলন ‘সাক্ষাৎকার ১৭’ (মাওলা ব্রাদার্স), ব্যক্তিগত গদ্যের সংকলন ‘নির্জন নোটবুক’ (সময় প্রকাশন) এবং কিশোরতোষ বই ‘ভরদুপুরের বিভূতিভূষণ’ (কাঠপেন্সিল প্রকাশনী, পরিবেশক-অন্যপ্রকাশ)।

এ সময়ের আরেক তরুণ সাহিত্যিক মোজাফ্ফর হোসেন। পাঞ্জেরী থেকে ‘পাঠে বিশ্লেষণে বিশ্ব গল্প’ ও গ্রন্থকুটির থেকে ‘বাংলা সাহিত্যের নানা দিক’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধের বই প্রকাশ হয়েছে।

মেলার মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ হবে আবুল হাসান সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া পাণ্ডুলিপি নিয়ে গল্পগ্রন্থ ‘পরাধীন দেশের স্বাধীন মানুষেরা। ’ তার লেখনীতে যাপিত জীবনের নানা গল্পগুলো উঠে আসে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে।

উদ্দীপনা ও প্রেরণামূলক লেখনীতে একটি জনপ্রিয় নাম আয়মান সাদিক। অধ্যয়ন প্রকাশনা থেকে প্রকাশ হয়েছে তার লেখা ‘স্টুডেন্ট হ্যাসক’ বইটি।

অন্য প্রকাশ থেকে এসেছে হক ফারুক আহমেদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নিঃসঙ্গতার পাখিরা’। তরুণ এ কবির কাব্যগ্রন্থটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে ইতোমধ্যেই। বই সম্পর্কে লেখক বলেন, আমাদের চেনা জানা পরিচিত বিষয় ও ভাবনার মধ্যে হলেও তা যেন পড়তে পড়তে একটি দৃশ্যকল্প তৈরী হয় এবং পাঠ শেষে নতুন একটা বিষয়বোধ কাজ করে।

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গবেষণা নিয়ে বেহুলা বাংলা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে তরুণ লেখক ইমাম মেহেদীর ‘মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার নারী’ এবং ‘১৯৭১: ডাঁশার চাষীক্লাব’। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই বইদুটি একটু ভিন্ন মাত্রার হবে বলেই জানালেন লেখক।

প্রকাশকরাও বলছেন অনেক ভাল এবং পুরনো লেখকের তুলনায় ভাল করছেন তরুণ লেখকরা। এর অন্যতম কারণ তরুণ লেখকদের পড়াশোনা করে লেখাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

এদিকে, সোমবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপম হায়াৎ। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী আমানুল হক, স্থপতি এবং বেঙ্গল গ্রুপের পরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানী।

আলোচকবৃন্দ বলেন, বুলবুল চৌধুরী নৃত্যচর্চায় সমকালীন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। তার অনুসৃত পথ ধরে নৃত্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, একাডেমি, সমিতি, শিক্ষা, গবেষণা, প্রকাশনা এগিয়ে চলেছে তার জন্মশতবর্ষ পরেও। জন্মশতবর্ষে বুলবুল চৌধুরীর সমস্ত সৃষ্টিকর্ম সংগ্রহ, সংরক্ষণপূর্বক প্রচার, প্রকাশ, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তার নৃত্যকর্ম পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তাকে নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা যেতে পারে।  

সভাপতির বক্তব্যে কামাল লোহানী বলেন, বুলবুল চৌধুরী নৃত্যের পাশাপাশি ‘প্রাচী’ নামের উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। তার নৃত্য কেবল প্রায়োগিক শিল্পকলা নয়, একই সঙ্গে সমস্ত অসুন্দর এবং কলুষতার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদের নাম।  

আলোচনা শেষে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং চঞ্চল আশরাফ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন গোলাম সারোয়ার এবং মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ ইমাম খান তমাল। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী চন্দনা মজুমদার, শফিমণ্ডল, সেলিম চৌধুরী, পাগলা বাবুল, রুশিয়া খানম এবং কোহিনুর আকতার গোলাপী।

মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১২তম দিন। এদিন মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি-অনুবাদক মনিরউদ্দীন ইউসুফ: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশ নেবেন শফিউল আলম, রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং মোহাম্মদ আবদুল হাই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

নতুন বই
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে একাদশ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১২৮টি। এর মধ্যে গল্প ২১টি, উপন্যাস ১৬টি, প্রবন্ধ ১০টি, কবিতা ৪৯টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৪টি, রচনাবলি ১টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ২টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৪টি, ভ্রমণ ৩টি, ইতিহাস বিষয়ক ৫টি, রাজনীতি ১টি, স্বাস্থ্য ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য ৫টি। এদিনের উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে সময় প্রকাশন থেকে সৈয়দ শামসুল হকের নাটক 'ফজল শেখের শেষ ম্যাজিক ও অন্যান্য', চিলড্রেন বুক কালেকশন এনেছে আনিসুল হকের ‘গুড্ডু বুড়ার নতুন বোকামি তারপর’, কথাপ্রকাশ এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী’র প্রবন্ধ ‘গণতন্ত্রের অভিমুখে’ ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
এইচএমএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।