ঢাকা: গত সপ্তাহে কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন বগুডার আবদুর রহিম। জরুরিভাবে একদিনের সিদ্ধান্তে ঢাকায় আসেন তিনি।
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে এক কথায় বলেন, ‘দুঃসহ যাত্রা’। ‘মনে হচ্ছিল, প্লেনে নেই। কোন কাঁচাবাজারে রয়েছি। ফ্লাইটের মধ্যেই হকারি শুরু হয়ে যায়। খুবই বিব্রতকর’।
২০১১ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বন্ধ হয়ে যায় এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট। সেই সময় অনেক যাত্রীর কাছে অনলাইনে টিকিট বিক্রি করে কোম্পানিটি। তবে ঢাকা থেকে কোম্পানি গুটিয়ে নিলেও যাত্রীদের পাওনা পরিশোধ করেনি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স কোম্পানিটি। এজেন্টদের টাকাও আটকা পড়ে কোম্পানির কাছে। এরপর ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে আবারো ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে চালু হয় এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট। এ পর্যায়ে জিএসএ হিসেবে ব্যবসা শুরু করে টোটাল এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড।
আবদুর রহিম নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে কোন কাউন্টারে যাবো, সেটি বোঝা যায় না। এ এয়ারলাইন্সে সাধারণত মানুষ শর্টট্রিপ করেন। তাই চেক-ইন কাউন্টার খোলে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে। ঢাকার ফ্লাইট লংট্রিপই বলা যায়। দেশে ফেরার সময় মানুষ অনেক ভারি ব্যাগ বহন করেন। তখন চেক-ইন কাউন্টারে শুরু হয় হুড়োহুড়ি।
তিনি বলেন, ‘কুয়ালালামপুরের কেএলআইএ-২ এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়ে এয়ার এশিয়া। ঢাকার ফ্লাইটটি ছাড়া হলো সময়ের চেয় সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে। আর সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় ফ্লাইটের ভেতরে’।
এয়ার এশিয়ায় ভ্রমণ করে অপমানিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মুন্সীগঞ্জের রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘ফ্লাইটে কয়েকজনকে টিকিট দেখে দেখে খাবার দেওয়া হলো, বেশিরভাগকে দেওয়া হলো না। কারণ জানতে চাইলে কেবিন ক্রুরা বলেন, এই ফ্লাইটে ডিনার করতে হলে টিকিট বুকিংয়ের সময়ই বাড়তি টাকা দিতে হয়। তবে যেহেতু সকলেই প্রায় এজেন্টকে দিয়ে টিকিট করান, এজেন্ট বাংলাদেশিদের খরচ কমের কথা বিবেচনা করে আর খাবারের অর্ডার দেন না’।
‘অথচ যাত্রীরা ভাবেন, অন্য সকল ফ্লাইটের মতো এখানেও কমপ্লিমেন্টারি খাবার দেওয়া হবে। কারণ, টিকিটের খরচ অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর তুলনায় কোনো অংশে কম নয়, বরং বেশিই বলা যায়’- বলেন রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘যারা খাবারের অগ্রিম বুকিং দেননি, তাদের কাছে খাবার ও পানীয় বিক্রি করা হয়। সেখানে ১৫০ এমএলের পানি বিক্রি করা হয় ১০০ টাকায়। আর খেতে চাইলে ১০০০ টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। ফলে অনেকেই খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েন। আবার না খেয়েই ৪ ঘণ্টার ভ্রমণ করতে হয় অনেককে’।
যাত্রীদের অভিযোগ, ফ্লাইটের ভেতর হকারির। বলেন, ‘এখানে খাবার বিক্রি চলে হকারের মতো। এরপর চকলেট-বিস্কুট কয়েক রাউন্ডে। এর মাঝে মাঝে এয়ার এশিয়ার সুভিনিয়র বিক্রি হয়। কেবিন ক্রুরা হকারের মতোই কাঁধে নিয়েই বিক্রি করেন ঘড়ি, নেলকাটার, কলম, টর্চলাইট থেকে শুরু করে হরেক রকমের জিনিস। মনে হয় পুরো ফ্লাইট একদম বাজার হয়ে গেছে’।
বাজেট এয়ারলাইন্স হলেও এয়ার এশিয়া কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন অনেক বেশি। ফ্রোজেন ফুড ব্যবসায়ী সোলেমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাকার্তা থেকে কুয়ালালামপুরে সোয়া ২ ঘণ্টার জার্নি। সেক্ষেত্রে ওয়ানওয়ে টিকিটের মূল্য মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা। কুয়ালালামপুর থেকে ব্যাংকক ২ ঘণ্টার ভ্রমণেরও ভাড়া তাই। অনেক সময় আরো কমও হয়। অথচ ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে এয়ার এশিয়ায় ওয়ানওয়ে টিকিটের জন্যে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে। বাজেট এয়ারলাইন্সের প্রেক্ষিতে এটা স্রেফ ডাকাতি’।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে টোটাল এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কে এম মজিবুল হককে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
এমএন/এএসআর