ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন নরওয়ে, সুইডেন এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত। এই বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। তারা দলের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প কাউকে চিন্তা করছেন না। অন্যদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সমর্থকরাও এটিকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের নীলনকশা হিসেবে দেখছেন।
গত ৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তার সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার।
সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মহিউদ্দিন মাহমুদ। জানতে চেষ্টা করেছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা কী ভাবছেন।
ছাত্র-জনতার রোষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে অভিভাবকহীন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দূরে সরে গেছে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। আবার একেবারে অনুগত নেতাকর্মীদের অনেকে এখনো অপেক্ষায় আছেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন’ এবং আবারও ‘দেশ ও দলের হাল ধরবেন’ সেই আশায়।
আওয়ামী লীগ কর্মী আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এসব বৈঠক নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত আছেন ততদিন তারা অন্য কারো কথা চিন্তা করতে পারছেন না। তবে শেখ হাসিনাই যদি আওয়ামী লীগ পরিচালনার জন্য কাউকে নেতা হিসেবে ঠিক করে দেন সেটা ভিন্ন কথা।
সীমান্ত কাউছার নামে তৃণমূলের আরেক কর্মী বলেন, সাবের হোসেনকে দিয়ে যদি আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তবে আমরা মেনে নেব না। সাবের হোসেন চৌধুরীর সততা ও নেতৃত্বের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই।
তিনি বলেন, এমনকি সজীব ওয়াজেদ জয়কেও আমাদের অনেকে নেতা হিসেবে মেনে নেবে না। সেখানে সাবের হোসেন চৌধুরীর তো প্রশ্নই আসে না। তবে শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল হলে সেটা হয়তো অনেকে বিবেচনা করতে পারে।
তৃণমূলের আরেক কর্মী রাকিব আহমেদ বলেন, কে কোথায় বৈঠক করলো আমরা সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মী সাইফুউল্লাহ বলেন, এ মিটিং নিয়ে আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবে সাবের হোসেন চৌধুরীকে মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত নই।
নিজামউদ্দিন নামে তৃণমূলের আরেক নেতা বলেন, আমরা বোঝার চেষ্টা করছি কেন এই মিটিং। এটি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও হতে পারে।
তিনি বলেন, তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ, তার সিদ্ধান্ত বা নেতৃত্ব ছাড়া কোনো কিছু ভাবছেন না। শেখ হাসিনাকেই নেতৃত্বে থাকতে হবে।
সাবের হোসেনের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে নিজামউদ্দিন আরও বলেন, নেতারা একা, কর্মী ছাড়া তারা সারাদেশে একটা ভোটও টানতে পারবে না। সুতরাং কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে কিছু হতে চায় সেটা তৃণমূল মেনে নেবে না।
তৃণমূলের আরেক নেতা নাজমুল বলেন, সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের পেছনের কারণ সম্পর্কে কিছুই জানি না। এটা ষড়যন্ত্র না কি শেখ হাসিনার সিগনালে হচ্ছে এটাও আমরা জানি না।
তিনি বলেন, আমরা শেখ হাসিনা ছাড়া কিছু চিন্তা করছি না। উনি নিজে আওয়ামী লীগ সভাপতি থেকে অন্য কাউকে বাকি কাজ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব দিলে মেনে নেব।
ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে দিশেহারা দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের বেশিরভাগ দেশে-বিদেশে পলাতক। অনেকে বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দী। টানা ১৬ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে এখন বিলুপ্তির পথে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীই আত্মগোপনে অথবা পালিয়ে বিদেশ চলে গেছেন।
এমইউএম