ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

রাতে অরক্ষিত এটিএম বুথ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
রাতে অরক্ষিত এটিএম বুথ ছবি: দিপু মালাকার - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ব্যাংক খোলা থাকাকালীন চেক হাতে লাইনে দাড়িয়ে টাকা তোলার বিকল্প হিসেবে খুব কম সময়েই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) লেনদেন ব্যবস্থা। আর গ্রাহক চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলোও ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয় স্থাপন করেছে এটিএম বুথ।


দেশে ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ছাড়া সবগুলো ব্যাংকই কমবেশি এটিএম বুথ সেবা চালু করেছে। দেশজুড়ে প্রায় ১০ হাজার বুথের মাধ্যমে প্রায় ৯০ লাখ গ্রাহক এ সেবার আওতায় এসেছেন।

সম্প্রতি এটিএম বুথ স্কিমিংয়ের ঘটনার পর এটিএম লেনদেন নিরাপদ করতে ও ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর করণীয় সর্ম্পকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তারপরও দেখা গেছে, দিনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেও রাতে বুথগুলো পড়ে থাকছে নিরাপত্তাহীন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির পর ব্যাংকগুলো কতোটা সতর্কাবস্থান নিয়েছে, তা জানতে গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) দিনগত রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে সরেজমিনে ঘোরা হয়।

এ সময় গুলশান-বনানী এলাকায় অবস্থিত এটিএম বুথগুলোয় নিরাপত্তা কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেলেও অন্য কোনো স্থানের বুথে কোনো নিরাপত্তা কর্মীকে দেখা যায়নি।


মালিবাগ, বাড্ডা, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ি, বাসাবো, কমলাপুর, মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর এলাকা দেখা যায়, এটিএম বুথগুলোয় কোনো নিরাপত্তা কর্মী নেই। আবার দু’একটি বুথে নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও তারা ঘুমন্ত।
 
সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্র্যাক, ডাচ বাংলা, আইএফআইসি, যমুনা, এক্সিম, এবি ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।


সম্প্রতি টাকা তোলার নামে প্রতারক চক্র এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে নেয়। তারপর এ তথ্য দিয়ে নকল কার্ড তৈরি করে হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমান অর্থ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, কার্ড ক্লোনিং করে এ প্রতারক চক্র ইস্টার্ন ব্যাংকের ২৮ গ্রাহকের ১৭ লাখ ৫৩ হাজার, সিটি ব্যাংকের ৪ গ্রাহকের ১ লাখ ৪০ হাজার, ইউসিবি’র ৭ গ্রাহকের ১ লাখ ২৬ হাজার ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এক গ্রাহকের ৪০ হাজার টাকা তুলে নেয়।
 
এ ঘটনার পর চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি এটিএম লেনদেন নিরাপদ ও ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর করণীয় সর্ম্পকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট।
 
প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, সব নির্দেশনাই পালন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেউ না করলে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এটিএম বুথগুলোয় নিয়োজিত গার্ডদের জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধে করণীয় সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়াও টুপি ও সানগ্লাস পরা এবং ব্যাগ বহনকারী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

ধানমন্ডি এলাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বের হচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মাঝে মধ্যেই রাতে এই বুথে টাকা তুলতে আসি। অনেক সময়ই নিরাপত্তাকর্মীর দেখা মেলে না। সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা না থাকলে প্রতারক চক্র আবারও গ্রাহকের তথ্য চুরির সুযোগ পাবে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বাংলানিউজকে বলেন, রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা ঘুমিয়ে থাকে কিনা আমার জানা নেই। যদি ঘুমায় বা বুথে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে তাহলে ভবিষ্যতে আরও ঝুঁকিতে পড়বে এটিএম বুথগুলো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
এসই/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।