ঢাকা: তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সংক্রান্ত নিরাপত্তার অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়েছে বলে মনে করছে এ বিষয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি।
বুধবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দেওয়া অন্তবর্তী প্রতিবেদন এ কথা বলা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সব কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনার জন্য সফটওয়্যার উন্নয়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়ে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর এ সুযোগে রিজার্ভ হ্যাক করে অর্থ স্থানান্তরের বার্তা পাঠায় একদল চীনা হ্যাকার।
অন্তবর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় কমিটির প্রধান ড. ফরাস উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর, তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং সদস্য সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র বলছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে অর্থমন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করেন কমিটির সদস্যরা। প্রায় ঘণ্টা খানেক বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান ড. ফরাসউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাজ ছিলো ৩০দিনের মধ্যে অন্তবর্তী প্রতিবেদন দেওয়ার সেটা দিয়েছি, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই সরকার এটি নিরীক্ষা করবেন।
‘সরকারকে দম ফেলার সময় দিতে হবে। বিষয়টি হজম করতে হবে তো। প্রতিবেদন নিয়ে আমি স্যাটিসফাইড। সরকারের পড়ার আগে প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। ’
তিনি বলেন, ‘সরকার এটি পড়বে। তারপর হয় কথা বলবে, না হয় আমাদের কথা বলতে বলবে। অনেক বেশি পরিশ্রম, অনেক চেষ্টা ও অনেক ডকুমেন্ট খতিয়ে দেশের জন্য বেশ ও সত্যনিষ্ঠ ফাইন্ডিংস দিয়েছি। ’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের জমা রাখা অর্থ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার দু’টি ব্যাংকে সরিয়ে নেয় হ্যাকাররা।
বিষয়টি তদন্ত করতে গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার।
কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে অন্তবরবর্তালীন প্রতিবেদন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
কমিটি গঠনের ৪দিন পর গত ২০ মার্চ অর্থমন্ত্রীর বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তধা বলেন ড. ফরাস উদ্দিন। এ সময় কমিটির অপর দুই সদস্যও ছিলেন।
এর দুই দিন পর অর্থাৎ ২২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে কমিটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী দুই ডেপুটি গভর্নর, সব বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন কমিটির সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট জানা যায়, অর্থ স্থানান্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে ও কার কাছে অবৈধভাবে অর্থ পরিশোধের নির্দেশ গেছে তা খতিয়ে দেখছে।
এছাড়া অবৈধ অর্থ পরিশোধ ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপ পর্যাপ্ত ছিলো কিনা, রিজার্ভ চুরির বিষয় কেন শুরুতে সরকারের কাছে গোপন করা হয়েছে, এর পেছনে যৌক্তিকতা কতটুকু তা বের করার জন্য নির্দেশ ছিলো কিনা-তাও উল্লেখ করা হয়েছে অন্তবর্তী প্রতিবেদনে।
প্রায় দুই মাস পার জমা দেওয়ার কথা রয়েছে টেকনিক্যাল প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে।
একই সঙ্গে চুরি হয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, ভবিষ্যতে এ ধরনের হ্যাক ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়- সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে কমিটি।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৬
এমএ/