ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের শীর্ষে রূপালী ব্যাংক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের শীর্ষে রূপালী ব্যাংক

ঢাকা: শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে রূপালী ব্যাংক। সরকারের বেধে দেওয়া সময়ে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ আদায় করেছে ব্যাংকটি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ঋণ আদায়ের বিশেষ অভিযানের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একযোগে শ্রেণিকৃত, অবলোপনকৃত এবং অশ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের জন্য বিশেষ আদায় অভিযান চালায়। এর ফলে গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া গত পাঁচ বছরে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বেড়েছে ১১৫ কোটি টাকা।  

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের মধ্যে খেলাপী ঋণ থেকে ১৫০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য টার্গেট দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। রূপালী ব্যাংক চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই শতভাগ ঋণ আদায় করতে সমর্থ হয়। এরমধ্যে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত কেবল টপ টুয়েন্টি থেকে ৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এর আগের বছর ২০১৫ সালে আদায় হয়েছে ৭ কোটি টাকা।  

রূপালী ব্যাংক সূত্র জানায়, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী যে ‘বিশেষ আদায় অভিযানে’ চলছে, তা অব্যাহত থাকলে শ্রেণিকৃত ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো চাইলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে করতে পারলে অবশ্যই সেটি রূপালী ব্যাংকের জন্য ভালো দিক।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় সম্ভব হলে ব্যাংকের স্বাস্থ্য ও গুণগত মান ভালো হবে। এক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংককে আরও মনোযোগী হতে হবে।  

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরপরের বছরগুলোতে ছিল যথাক্রমে ২০১১ সালে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ২০১৩ সালে ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২০১৪ সালে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এ ঋণের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিম শ্রেণিকরণ সংক্রান্ত নীতিমালা পরিবর্তন করায় ব্যাংকিংখাতে উল্লেখযোগ্যহারে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর প্রভাব রূপালী ব্যাংকের ওপরে পড়ে।  

অবশ্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে রেখে যাওয়া শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিনের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও কঠোর মনিটরিংয়ের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

শ্রেণিকৃত, অবলোপনকৃত এবং অশ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের জন্য রূপালী ব্যাংকের কার্যক্রমে মাঠে সংযুক্ত রয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দু’জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান কার্যালয় ও বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক। সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকের গ্রাহকদের সঙ্গে ডোর টু ডোর বৈঠক করে ঋণ আদায় করছেন এই কর্মকর্তারা।  

এ বিষয়ে ব্যাংকের রিকভারি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে রূপালী ব্যাংক ৫০ দিনের মধ্যে ৪শ’ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায় হবে ১৭০ কোটি টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ থেকে নগদ ৩০ কোটি টাকা এবং অশ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগদ ২০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপী ঋণের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে দারুণভাবে ব্যাহত করছে। শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ যতই বাড়ছে, মুনাফা অর্জনের পথ ততই সংকুচিত হচ্ছে। ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে খেলাপী ঋণ আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই ব্যাংকের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

আদায়ের লক্ষমাত্রা অর্জিত হলে রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের খেলাপী ঋণের পরিমাণ খুব দ্রুত হ্রাস পাবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এসই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।