ঢাকা: যে কর্মকর্তাকে অনিয়মের অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ছয়মাসের মাথায় সেই কর্মকর্তাই ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এমন তথ্য জানা গেছে গভর্নর নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটির পাঠানো নামের তালিকায়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বেসরকারিখাতের দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে আমানতকারীর অর্থ ঝুঁকিগ্রস্ত করায় যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে সিটি ব্যাংক ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণ করলেও তার কর্মকাণ্ডে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট নয় বলে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়া হয় বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে।
কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর বুধবার ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) পদে নিয়োগের জন্য সরকার গঠিত সার্চ কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো তালিকায় যে পাঁচজনের নাম সুপারিশ করে তাতে বদরুদ্দোজার নামও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গঠিত সার্চ কমিটি ডেপুটি গর্ভনর নিয়োগের তালিকা করেছে। তারা কোন প্রার্থীর অপরাধের বিষয়ে জানে না। ওই তালিকায় যদি অভিযুক্ত কেউ থাকে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত বিষয়টি অর্থমন্ত্রণালয়কে জানানো।
চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের বিতর্কিত সাবেক ডিএমডি বদরুদ্দোজা চৌধুরীরও সাক্ষাৎকার নেয়। ওই দিন মোট ১৬ জন প্রার্থীর মৌখিক সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নয়জন বর্তমান নির্বাহী পরিচালক, তিনজন সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও চারজন সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীর উত্তরায় নিজস্ব জমিতে ১৫ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছিল সিটি ব্যাংক। যার প্রকল্প প্রধান ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রকল্প গ্রহণে ব্যাংকের প্রকিউরমেন্ট পলিসির নিয়মনীতির লঙ্ঘনের বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করেননি। সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাজ করেছেন। ভবন নির্মাণে অনিয়মের দায়ভার তিনি এড়াতে পারেন না। দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়মের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকিগ্রস্ত করার দায়ভার বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপর বর্তায়।
এ ঘটনায় ১০ লাখ টাকা জরিমানাও দিতে হয়েছে সিটি ব্যাংককে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। দীর্ঘদিন পর তার ব্যাংকিং পেশায় ফেরা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, একটি ব্যাংকে অনিয়মের অভিযোগে তার চাকরি গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে কি করবেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সার্চ কমিটির ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলানিউজকে বলেন, কার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আমাদের জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
এসই/জেডএম