ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

কর্মীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করতে দৌড়ঝাপ বেসরকারি ব্যাংকের 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৬
কর্মীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করতে দৌড়ঝাপ বেসরকারি ব্যাংকের  ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী, ব্যাংকের নিট লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশের হকদার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কিন্তু শ্রমিকদের প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ করেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

 
 
শ্রম মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর একটি প্রতিনিধি দল ২৩২ ধারা থেকে রেহাই পেতে ২৭ সেপ্টেম্বর এই নিয়ে বৈঠক করেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা ব্যাংক আইনের সঙ্গে শ্রম আইনের ২৩২ ধারা সাংঘর্ষিক বলে অজুহাত ওঠে বলে জানায় শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র।  
 
শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৬ সালের শ্রমআইন পাশ হওয়ার পর থেকে  এ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক তাদের লভ্যাংশের অংশ দেয়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, যা আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ। কারণ, শ্রমআইনে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্প্রতি শ্রমকল্যাণ তহবিল থেকে যারা শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী শ্রমিকদের লভ্যাংশ দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাই দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। শ্রমআইনের ২৩২ ধারা থেকে রেহাই পেতে ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন তারা।  
 
শ্রম আইনের ২৩২ ধারা লঙ্ঘন করে প্রতি বছর বেসরকারি ব্যাংকগুলো কর্মীদের শত শত কোটি টাকা নিজেদের পকেটে পুরে নিচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।  
 
তবে আইন অনুযায়ী, ব্যাংকিং আইন ও শ্রম আইনের সাংঘর্ষিক অবস্থানে বেসরকারি ব্যাংকের অজুহাত ধোপে টিকবে না বলে মনে করছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ।  
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকের মুনাফার অংশ পাবেন না এটা ঠিক। কিন্তু শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের নিট লাভের পাঁচ শতাংশের মালিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু ব্যাংকিং আইন হয়েছে ১৯৯১ সালে আর শ্রম আইন হয়েছে ২০০৬ সালে। সাংঘর্ষিক এমন অবস্থায় টিকবে শ্রম আইন। কারণ, আইনেই বলা রয়েছে- দু’টি আইনের ধারা যদি সাংঘর্ষিক হয় তাহলে নতুন আইনটিই গ্রহণযোগ্য হবে। সেক্ষেত্রে শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লভ্যাংশ দিতে বাধ্য বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এর কোনো বিকল্প নেই। এর বিকল্প কিছু করা হলে তা হবে আইন পরিপন্থি।  
 
অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আইন মেনে চলার বিষয়ে সতর্ক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।  
 
শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বরাবরই বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আইন মেনে চলে কার্যক্রম পরিচালনার কথা আগেও বলেছি, এখনও বলছি। আইন অনুযায়ী যদি ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ শ্রমিকদের দেওয়া বাধ্যতামূলক হয় তাহলে অবশ্যই তা তাদের দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।  
 
বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০টি বেসরকারি বাণিজ্যক ব্যাংক রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন বলে জানা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৬
ইউএম/এসএনএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।