ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংকিং

সরকারি সংস্থার কাছে ৫ ব্যাংকের পাওনা ৮ হাজার কোটি টাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৭
সরকারি সংস্থার কাছে ৫ ব্যাংকের পাওনা ৮ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো রাষ্ট্রের উপকারে আসার বদলে উল্টো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সংস্থা বছরের পর বছর লোকসান দিতে দিতে শ্বেতহস্তীর রূপ নিয়েছে। এরা ক্রমাগত ব্যাংক ঋণ নিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ঋণ পরিশোধের নামটি নেই। এদের অপরিশোধিত ও খেলাপি ঋণ জমতে জমতে এখন পাহাড়সমান।    

চলতি বছরের আগস্ট শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৭৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

জুলাই মাসের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ২১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও খেলাপি বেড়েছে ৭৭ কোটি ৬ লাখ টাকা।
 
জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় পাঁচটি ব্যাংকে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ১০৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ১৯৯ কোটির ৫৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
 
সরকারি সংস্থাসমূহের খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মান বাড়িয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্যমান ও সেবার পর্যায়ে উন্নীত করা গেলে এবং এর পাশাপাশি সীমাহীন দুর্নীতি ও অপচয় দূর করা গেলে এসব প্রতিষ্ঠানকেও লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসা পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগস্ট শেষে সোনালী ব্যাংকের দেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫,২৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংকের ১৯০১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ২২৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৭৫১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ২১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
 
অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ২০ লাখ টাকা।
 
এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংক খেলাপি ঋণ কিছুটা কমিয়ে আনলেও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে জনতা ব্যাংকের। জুলাই মাসের তুলনায় ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের কমেছে ৩৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের কমেছে ৩৭ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের কমেছে ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের কমেছে ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি) ২৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকার ফান্ডেড ঋণখেলাপি হয়েছে। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ৭৩৪ কোটি টাকা ঋণের খেলাপি হয়েছে ১শ ১৬ কোটি ৭০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (বিএসইসি) এর ৩৮৮ কোটি ২০ লাখ টাকার মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা।
 
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) এর ৪৫০ কোটি ৩১ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ঋণ ১ হাজার ১শ ১৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের এসব ব্যাংকে ঋণের পরিমান ৮০০ কোটি টাকা।
 
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের সংস্থাগুলোতে ৫৪৩ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ৫৪২ কোটি টাকাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। এছাড়াও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ১৭৯  কোটি টাকা, কৃষি ও মৎস্য খাতের সংস্থা বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) ১ হাজার ২৫০ কোটি এবং সেবা খাতে প্রতিষ্ঠানের ১২৩ কোটি টাকা ঋণ আছে।
 
জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, ৫টি ব্যাংকের মধ্যে একটিতে সরকারি সংস্থাগুলোর ঋণ বেড়েছে। বাকিগুলোতে কমছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়লে ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৭
এসই/জেএম 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।