শুধু সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক নয়, বেসরকারি খাতের অধিকাংশ ব্যাংকই নগদ টাকার সংকটে পড়ে গ্রাহকদের জন্য চালু করেছে বিভিন্ন প্রকার মাসিক সঞ্চয় স্কিম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন বেশিরভাগ ব্যাংক ৯ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে মেয়াদী আমানত নিচ্ছে।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, দু-একটি বেসরকারি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছেন। মেয়াদী আমানত তুলে নিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও। এসব কারণে তারল্যের ওপর চাপ বাড়ছে। ভবিষ্যতে সংকট আরও তীব্র হলে এর প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি ব্যাংকে টাকার সংকট নেই। টাকা কমে গেছে বেসরকারি ব্যাংকে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় টাকার সংকটের বড় অংশই পূরণ করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক।
ব্যাংকিং খাতের এই সংকট মোকাবেলায় সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দু-দফায় বৈঠক করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সর্বশেষ ১ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বেশকিছু দাবি মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এতদিন সরকারি সংস্থার তহবিলের ৭৫ শতাংশ অর্থ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে জমা রাখা হতো। বাকি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রাখা হতো বেসরকারি ব্যাংকে। এখন থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিলের ৫০ শতাংশ সরকারি ও বাকি ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখতে হবে। বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে কমানো হয়েছে ১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতের ২০টি ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট চলছে। এসব ব্যাংক নতুন করে ঋণ না দিয়ে আদায়ের চেষ্টা করছে। আমানত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা সমন্বয়ের চেষ্টা করায় আমানতের সুদহারের পাশাপাশি ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো ২০১৭ সালের জুন থেকে ব্যাপক হারে ঋণ বিতরণ করেছে। এ সময়ে আমানত বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের কম হলেও ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ হারে। যার ফলে ব্যাংকের তারল্য শেষ হয়ে গেছে। একদিকে আমানত সংগ্রহ কম হয়েছে, আবার আগের বিতরণ করা ঋণের টাকাও আদায় হচ্ছে না, খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
গত এক বছরে খেলাপি ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এই ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়েছে। এছাড়াও ৪৫ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। ঋণ অবলোপন করার জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর আটকে গেছে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। এসব কারণেই তারল্য সংকট প্রকট হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা অলস তারল্য ছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তা কমে মাত্র ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ অলস তারল্যের বেশিরভাগ রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোয়। বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় অলস তারল্য দূরের কথা, নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও নেই।
এ বিষয়ে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, বৈঠকে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠাসহ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার সিআরআর কমানো। ১ শতাংশ সিআরআর কমানো হয়েছে, সরাসরি ১০ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর হাতে আসবে। আশা করছি এতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কেটে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৮
এসই/এমজেএফ