ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

সঞ্চয়পত্রে কালোটাকার বিনিয়োগ বন্ধ হচ্ছে!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
সঞ্চয়পত্রে কালোটাকার বিনিয়োগ বন্ধ হচ্ছে! সঞ্চয়পত্র

ঢাকা: কালো টাকা এবং অতিরিক্তি বিনিয়োগ বন্ধ করতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। এখন থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে অর্থ জমা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ই-টিন সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

ডাটাবেজ তৈরির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই যাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। সঞ্চয়পত্রে সীমার অতিরিক্ত কালো টাকার বিনিয়োগও যেন বন্ধ হয়।

প্রাথমিকভাবে এ ডাটাবেজ বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর ও বাংলাদেশ পোস্ট অফিসে চালু করা হবে। প্রধান কার্যালয়ে তিনমাস এ কার্যক্রম পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হবে। পরবর্তীতে সারাদেশে বিভাগীয় ও জেলা শহরের অফিসে চালু করা হবে।

সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শক্তিশালী করতে এ প্রকল্প চালু করার জন্য চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অর্থবিভাগে পাবলিক এক্সপেনডিচার ম্যানেজমেন্টস্ট্রেনদেনিং প্রোগ্রামমের অধীনে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এজন্য ‘ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটস অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে সঞ্চয়পত্রের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।

রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) অর্থবিভাগের সচিব আব্দুর রউফ সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ ডাটাবেজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

নতুন এ ডাটাবেজ চালু হলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এজন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই আসবে। একই সঙ্গে কালোটাকা বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করা যাবে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর শেষে ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে মোট বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০ কোটি ৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, সারাদেশে অবস্থিত পোস্ট অফিস ও ব্যাংকগুলোর সঞ্চয়পত্র বিতরণ বিভাগ থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রয়কারী ব্যাংক ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন স্কিমে প্রায় ২ কোটি মানুষ বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন মেয়াদের ১১টি স্কিম চালু রয়েছে।

৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিনমাস পর পর মুনাফা প্রাপ্ত পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, পারবারিক সঞ্চয়পত্রের সদুহার ১১ দশমিক ৫২শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এছাড়াও পোস্ট অফিস সাধারণ সঞ্চয় হিসাবের সুদহার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, পোস্ট অফিস সঞ্চয় মেয়াদি হিসাব ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, পোস্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের সুদহার ৪ দশমিক ২ শতাংশ, বাংলাদেশ প্রাইজ বন্ডের সুদহার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ইউএস প্রিমিয়াম বন্ডের সুদহার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের সুদহার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ওয়েজ আর্নাস ডেভলপমেন্ট বন্ডের সুদহার ১২ শতাংশ।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব বলেন, বর্তমানে নগদ টাকা দিয়ে এবং একজন ভিন্ন ভিন্ন নামে সঞ্চয়পত্র কিনছে। সঞ্চয় অধিদফতরের কাছে সর্ম্পকে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আবার ঘোষণা দিয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধও করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন উপায় চালু করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুন্নাহার বেগম বাংলানিউজকে বলেন, নতুন ডাটাবেজ চালু করা হলে ৫০ হাজার টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে হবে। দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ই-টিন সনদের কপি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
এসই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।