বুধবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রূপালী বাংকের বার্ষিক ব্যবসায়ী সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান।
রেমিটেন্সে পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে বিদেশে রূপালী ব্যাংকের কোনো শাখা নেই উল্লেখ করে এমডি বলেন, সম্প্রতি রূপালী ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব ঘুরে এসেছে।
রূপালী ব্যাংকের এমডি বলেন, এজন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফামাক্যাশের মাধ্যমে সৌদি আরবে কর্মরত অবৈধ শ্রমিকদের নামে কার্ড ইস্যু করে অ্যাপস’র মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারি। এটি চালু করা গেলে আড়াই বিলিয়ন ডলার দেশে আনা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, সৌদিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমাদের বলেছেন, সেখানে রূপালী ব্যাংকের শাখা খোলা হলে অনেকগুলো সংকটের সমাধান করতে পারবো। সৌদিতে অন্যান্য দেশের ব্যাংকগুলোর শাখা রয়েছে। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকের শাখা না থাকায় প্রবাসী শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ঠিকাদারি কাজ করতে পারছেন না।
এমডি বলেন, আমাদের দুর্বলতা হচ্ছে রূপালী ব্যাংকের বিদেশে কোনো শাখা নেই। যার মাধ্যমে আমরা রেমিটেন্স গ্রহণ করতে পারবো। এর আগে কখনো এ ধরনের শাখা স্থাপন করা হয়নি। ফলে রেমিটেন্সে আমরা পিছিয়ে আছি।
যেসব দেশে প্রবাসীরা আছেন, সেখানে রূপালী ব্যাংক শাখা খুলে রেমিটেন্সের চেহারা পাল্টে দিতে চায় আগামী দুই বছরের মধ্যে। এজন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী, গর্ভনর ও সচিবকে অবহিত করেন আতাউর রহমান প্রধান।
এমডি বলেন, বর্তমানে একটি নতুন ব্যাংক চালু করতে গেলে ৪শ’ কোটি টাকা মূলধন প্রয়োজন। সেখানে রূপালী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে মূলধন চেয়েছি। মূলধন সংকটের কারণে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য করতে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।
‘যখনই আমরা কোনো দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে যাই। তখনই বলা হয়, এতো কম মূলধনের ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করা যাবে না। মূলধন দেওয়া হলে আর কোনো সাহায্যের জন্য রূপালী ব্যাংক কারও কাছে যাবে না, এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি,’ বলেন তিনি।
ঋণ বিতরণ সর্ম্পকে এমডি বলেন, এখন গুরুত্ব দিয়েছি এসএমএই ফাইন্যান্সিংয়ে। সারাদেশের শাখা ব্যবস্থাপকদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এজন্যই আমাদের ব্যবসা সম্মেলনে সারাদেশের শাখা ব্যবস্থাপকদের নিয়ে করা হয়।
রূপালী ব্যাংকের এমডি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২০১৬ সালেও ব্যাংকটি প্রায় একশ’ কোটি টাকা লোকসানে ছিল। সারাদেশে লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ১৪৪টি। পরের বছরই লোকসান কাটিয়ে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা মুনাফা করেছে রূপালী ব্যাংক। আমি বলি এখানে কৃতিত্বের কিছু নেই। আমরা শুধু ঘুরে দাঁড়িয়েছি। লোকসান থেকে লাভে এসেছি।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৭শ’ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৪শ’ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যাংকটির ৫৬৮টি শাখাই অনলাইনের আওতায় রয়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮,৯৫৫ কোটি টাকা, ঋণ বিতরণ করেছে ২৪,৭৪৯ কোটি টাকা, খেলাপি ঋণ ৪,১৪০ কোটি টাকা, খেলাপি ঋণ আদায় ১৮৭ কোটি টাকা, ঋণ অবলোপন ৬১৪ কোটি টাকা, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায় ২৮ কোটি টাকা, আ লোকসানি শাখা ৮টি।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯
এসই/জেডএস