বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে দেশের কর্যরত সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাংকগুলোর ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।
তবে, ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় মৃত ব্যক্তির নিজ নামে অথবা তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত ঋণ/বিনিয়োগ হিসাব ঋণ-শ্রেণিমান নির্বিশেষে ও অর্থ ঋণ আদালত আইন অনুযায়ী মামলাযোগ্য না হলে মামলা দায়ের ব্যতিরেকে অবলোপন করতে পারবে। তবে একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উপার্জনক্ষম উত্তরসূরি রয়েছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণ-বিনিয়োগ অবলোপনের অন্যান্য সব নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।
অবলোপনযোগ্য ঋণ-বিনিয়োগের বিপরীতে ব্যাংকের অনুকূলে বন্ধকীকৃত সম্পত্তি (যদি থাকে) নিয়মানুগভাবে বিক্রয়ের প্রচেষ্টা গ্রহণ, ব্যাংকে নিশ্চয়তা প্রদানকারী ব্যক্তি-ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে পাওনা অর্থ আদায়ে সমর্থ্য না হলে উক্ত ঋণ-বিনিয়োগ অবলোপনের আওতায় আসবে। অবলোপনের জন্য নির্বাচিত ঋণ-বিনিয়োগ হিসাবসমূহের ক্ষেত্রে পূর্বে আইনগত ব্যবস্থা সূচিত না হয়ে থাকলে অবলোপনের পূর্বে অবশ্যই অর্থ ঋণ আদালত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করতে হবে। তবে ক্ষুদ্র অংকের ঋণের ক্ষেত্রে মামলা করতে হলে মামলা খরচের পরিমাণ প্রায় ঋণাংকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় বিধায় অর্থ ঋণ আদালত আইনের আওতায় অত্যাবশ্যকীয়ভাবে মামলাযোগ্য না হলে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত যে কোনো অংকের অবলোপনযোগ্য ঋণ-বিনিয়োগ আদালতে মামলা দায়ের ব্যতিরেকে অত্র সার্কুলারের নির্দেশনা সাপেক্ষে অবলোপন করা যাবে। অবলোপনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ঋণ-বিনিয়োগ হিসাবের স্থিতি হতে রক্ষিত স্থগিত সুদ বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট ঋণস্থিতির সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষিত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অবলোপনের জন্য চিহ্নিত প্রতিটি ঋণ-বিনিয়োগ হিসাবের বিপরীতে রক্ষিত প্রভিশন পর্যাপ্ত না হলে ব্যাংকের চলতি বছরের আয় খাত বিকলন করে অবশিষ্ট প্রভিশন সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ঋণ-বিনিয়োগ হিসাব আংশিকভাবে অবলোপন করা যাবে না। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো ঋণ-বিনিয়োগ হিসাব অবলোপন করা যাবে না।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৮(ক) ধারা অনুযায়ী অবলোপনের পরও সংশ্লিষ্ট ঋণ-বিনিয়োগের উপর ব্যাংকের দাবি বহাল থাকবে। ব্যাংক কোম্পানি অবলোপন-পরবর্তী সময়ে উক্ত অবলোপনকৃত ঋণ-বিনিয়োগ আদায়ের লক্ষ্যে আইনগত প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে। অবলোপনকৃত ঋণ-বিনিয়োগ হিসাবের বিপরীতে দায়েরকৃত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা কিংবা অবলোপনকৃত ঋণ-বিনিয়োগ হিসাবের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ আদায়ের জন্য বিআরপিডি সার্কুলার নং-০২/২০১৫ এর আলোকে প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিত করা যাবে।
অবলোপনকৃত ঋণ-বিনিয়োগ এর হিসাব একটি পৃথক লেজারে সংরক্ষণ করতে হবে এবং ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৩৮ ধারায় বর্ণিত তফসিলের ‘আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনা’ অনুযায়ী রিপোর্ট করতে হবে। খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ/বিনিয়োগ অবলোপন করা হলেও সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা তার ঋণের দায় সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত যথা নিয়মে খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হবেন। অবলোপনকৃত ঋণ/বিনিয়োগের হিসাবের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) যথারীতি রিপোর্ট করতে হবে।
অবলোপনকৃত ঋণ-বিনিয়োগ হিসাব পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা যাবে না। শুধুমাত্র এক্সিট প্লানের আওতায় এরূপ ঋণ/বিনিয়োগ হিসাবের পরিশোধ সূচি নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে, উক্ত ঋণ/বিনিয়োগ হিসাবসমূহ শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে অত্র সার্কুলারের ৪(খ) এ বর্ণিত নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। ব্যাংকের পরিচালক বা প্রাক্তন পরিচালক বা পরিচালক থাকাকালীন সময়ে ঐ ব্যক্তির নিজের/স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৭(২) ধারার ব্যাখ্যা অনুযায়ী নামে গৃহীত ঋণ/বিনিয়োগ অবলোপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ হতে পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এ নীতিমালা জারির দ্বারা এতদসংক্রান্ত ইতোপূর্বে জারি করা সব নির্দেশনা বাতিল বলে গণ্য হবে। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯
এসই/আরআইএস/