আর এই সুযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে কয়েকটি ব্যাংক। তবে বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশ্বে বাণিজ্যের প্রধান মুদ্রা মার্কিন ডলারেই লেনদেন হয় আমদানি-রপ্তানি বিল পরিশোধ। প্রবাসী আয়ের হিসাবটিও করা হয়ে থাকে ডলারেই।
তাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কত টাকায় ডলার কেনাবেচা করবে তা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বর্তমান বাজার দর ৮৪ দশমিক ১০ টাকা। তবে কেউ কেউ আবার এই ডলার বিক্রি করছে ৮৪ দশমিক ৫৬ টাকা থেকে ৮৫ টাকায়ও।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস উল ইসলাম বলেন, যখন আমার রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হবে, তখনই একটি তফাৎ তৈরি হবে। আর এ সুযোগে কেউ কেউ বাড়তি দামে ডলার বিক্রির চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দামে ডলার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা তাদের তলব করেছি, কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ মানছে না। সন্তাষজনক জবাব না পেলে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ব্যাংকে বিক্রি করার ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা থাকলেও চাহিদার ওপর নির্ভর করে দাম কমানো-বাড়ানো হচ্ছে খোলা বাজারে ডলার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মানি একচেঞ্জগুলোতে।
মতিঝিলের কয়েকটি মানি একচেঞ্জ কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৬ থেকে ৮৭ টাকায়। ছয় মাস আগেও এক ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, প্রবাসী এবং রপ্তানি আয় দিয়ে ডলারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমাদের দরকার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। বিদেশিরা মেশিনারি ও মূলধন নিয়ে আসলে আমাদের ডলারের মজুদ অনেক বেড়ে যাবে। তখন আমদানি ও রপ্তানির একটি ভারসাম্য তৈরি হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ডলারের সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। গেল বছরের একই সময় ছিল ৩৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটে আমদানি ঋণপত্র কুলতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। চাহিদার ১৫ শতাংশ আমদানি ঋণপত্র খুলতে পারছে সময়মতো। একারণে অঘোষিতভাবে বিলাসী পণ্য আমদানি ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানা গেছে, প্রতিমাসে সব মিলিয়ে ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। আর একই সময়ে রপ্তানি এবং প্রবাসী আয় মিলে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে ৪৪০ কোটি ডলার। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় ডলার সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে ঋণপত্র খুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিটেন্স আগের চেয়ে বাড়লেও আমদানি ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি। যে কারণে ডলারের সংকট কাটছে না। এটিই হচ্ছে ডলার সংকটের মূল কারণ। এই সংকট সহসা কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার সংকট কাটাতে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নতুন পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আমদানি কমাতে যেসব পণ্য মানুষ বিলাসিতায় ব্যবহার করে সেগুলোর ঋণপত্র না খুলতে ব্যাংকগুলোতে অঘোষিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মুদ্রা বাজারের সংকট কাটাতে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ১৭০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এসই/এমজেএফ