ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংকিং

স্বর্ণ-আসবাবপত্র-মোটরগাড়ি বন্ধক রেখেও ঋণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৯
স্বর্ণ-আসবাবপত্র-মোটরগাড়ি বন্ধক রেখেও ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক

ঢাকা: বাড়িঘর, জমিজমা ও অন্যান্য অবকাঠামোর বাইরে স্বর্ণ, আসবাবপত্র, মোটরগাড়ি, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর বন্ধক রেখেও ঋণ নেওয়া যাবে। অর্থের প্রাপ্যতা সহজ  এবং প্রসারিত করতে নতুন জামানত গ্রহণের বিধান চালু করতে যাচ্ছে সরকার।

এসব ‘চলমান সম্পদ’ জামানত রেখে দ্রুত ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে ‘সিকিউরিটি লেনদেন (মুভিবল অ্যাসেটস) অ্যাক্ট’ নামে আইনের একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে, যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শিগগির আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।


 
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী বছরে প্রস্তাবিত আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হতে পারে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, আসবাবপত্র, স্বর্ণ, মোটরগাড়ি, কম্পিউটার, পেটেন্ট, স্বেচ্ছাসেবক, কপিরাইট এবং অন্যান্য অনেক বাস্তব এবং অদৃশ্য সম্পদ সমান্তরাল বলে বিবেচিত হবে। এতে মানুষের অর্থের প্রাপ্যতা আরও সহজ ও প্রসারিত করবে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ঋণ গ্রহীতাদের জমি, বাড়ি এবং অবকাঠামোর মতো অপরিবর্তনীয় সম্পদ জামানত রাখার বিধান রয়েছে।

সরকার প্রস্তাবিত আইনের অধীনে একটি নিরাপদ লেনদেন নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (সিকিউরড ট্রানজেকশন রেজিস্ট্রেশন অথরিটি) গঠন করবে, যাতে ঋণ গ্রহীতার জমি, ঘরবাড়ি, অবকাঠামোর পাশাপাশি চলমান সম্পদ নিবন্ধন কর‍ার মাধ্যমে একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গ্রাহক তার চলমান সম্পদ সিকিউরড ট্রানজেকশন রেজিস্ট্রেশন অথরিটিতে তালিকাভুক্ত করার পর নিবন্ধিত ব্যাংক সেখান থেকে জামানত নিয়ে ঋণ দেবে।
 
এটি বাস্তবায়ন হলে একজন গ্রাহক একই সম্পদ জামানত দিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব ব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার সূচক তালিকায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আসবে।

আইনটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের আগস্টে সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে আর্ন্তজতিক ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, আইনটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থের ৬৫ শতাংশ দিচ্ছে আইএফসি।

চুক্তি অনুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আইএফসি ইতোমধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি), বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, আইন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অংশীজনদের মতামত নিয়েছে।

এখন খসড়া আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
 
প্রতিবেশি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে এ ধরনের আইন প্রয়োগ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত আইন বাস্তবায়নের পরে উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থের যোগ‍ান সুযোগ সহজ হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত নিরাপদ লেনদেন নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত তথ্য ভাণ্ডারটির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নিরাপদে ঋণ বিতরণে সহায়তা করবে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো জামানত নিয়ে ঋণ বিতরণ করলেও নতুন আইন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, একই জামানত বন্ধক রেখে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের প্রচলনটি বন্ধ করতে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।

এছাড়াও অনেকের কোনো জমিজমা বা বাড়িঘর নেই, কিন্তু নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহৃত অনেক সম্পদ আছে। তারা চাইলে সেই সম্পদ বন্ধক দিয়েও ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। এতে মানুষের অর্থের প্রাপ্যতা অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৯
এসই/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।