কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ কোটি ৭৩ লাখ সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নিয়ে নতুন বছর শুরু হলেও জানুয়ারি মাস শেষে সক্রিয় হিসাব ছিলো ৩ কোটি ৩৫ লাখ। এপ্রিল মাসের শেষে তা ২ কোটি ৯১ লাখে নেমেছে।
সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব ফেব্রুয়ারিতে কমেছে ১ লাখ, মার্চে এক লাফে ১০ লাখ, এপ্রিলে নিষ্ক্রিয় হয়েছে ৩৩ লাখ হিসাব। চার মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিষ্ক্রিয় হিসাব দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশের বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারি মাস থেকেই মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব সংখ্যা কমার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। টানা চার মাস সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা কমলেও হিসাব খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এপ্রিল শেষে নিবন্ধিত মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা ৬ কোটি ৮৩ লাখ। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চার মাসে গ্রাহক কমেছে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও। নিষ্ক্রিয় হিসাব সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও লেনদেনে প্রভাব ফেলেনি। শুধু এপ্রিল মাসেই লেনদেন হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। নিষ্ক্রিয় হিসাব বাড়লে মোবাইল ব্যাংকিং খাতের অন্যান্য সূচকগুলোর প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক রয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী কোনো হিসাবে একটানা ৯০ দিন লেনদেন করা না হলেই তা নিষ্ক্রিয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই যেসব হিসাব নিষ্ক্রিয় রয়েছে সেগুলো শুধু নিবন্ধিত গ্রাহক হিসেবে গণনা করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মোবাইল ব্যাংকিং শিল্পের প্রবাহ শক্তিশালী করতে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এভাবে নিষ্ক্রিয় হিসাব কমলে ব্যবহারকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং শিল্পের সকল অপারেটরকে সমান সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছি। যার ফলে একমাত্র প্রকৃত গ্রাহকরাই ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে।
সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক হিসাব নিষিদ্ধ করেছে। একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একাধিক হিসাব থাকলে তা বন্ধ করে একটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। বর্তমানে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একটি হিসাবের বেশি খোলা যাচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগের প্রভাব পড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে।
বর্তমানে বিকাশ, রকেট ও ইউক্যাশসহ মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।
এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ‘নগদ’। নগদের ১৫ লাখ গ্রাহক থাকলেও তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের বাইরে রয়েছে।
এ বিষয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের হিসাব কমে নাই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিপুলসংখ্যক মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে। তারা সেবামূল্য পরিশোধে এটিএম কার্ড ব্যবহার করছে। মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা কমতে পারে তবে খুব বেশি নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের চার্জ বেশি হওয়ায় অনেকেই এখন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ, যেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা তোলার জন্য চার্জ দিতে হয় মাত্র ২ দশমিক ৫০ টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করতে চার্জ দিতে ১৮ দশমিক ৫০ টাকা।
তবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় শীর্ষস্থান দখলকারী বিকাশ বলছে, ব্যবহার কমে যাওয়ার মানেই অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় নয়।
বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, এজেন্ট, নিবন্ধিত মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব, মোট লেনদেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয় ও অন্যান্য সেবার বিল মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, একটি অ্যাকাউন্টে ৯০ দিন লেনদেন না হওয়াকে নিষ্ক্রিয় ধরা হয়েছে। প্রতিমাসের এই চিত্র সমান নয়। একে মাসে একেক রকম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এপ্রিল মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট ৪৩ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৯ হাজারে। ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ছিলো ৮ লাখ ৮৬ হাজার।
তবে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আশা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহকারীরা আবারও ফিরে আসবেন। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক দৈনিক লেনদেনে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। একই সঙ্গে ঈদুল ফিতরের আগে কোম্পানিগুলো কেনাকাটায় ক্যাশব্যাক অফার দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৯
এসই/এমজেএফ