জানা যায়, সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ অধিগ্রহণ করবে। কোম্পানি দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ নিষ্পত্তি ও পুনর্গঠন করতে সহায়তা করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে এখন আইনের খসড়া তৈরির কাজ চলছে। অনেক সময় লাগবে। আইনটি পাসের জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে জাতীয় সংসদে তোলা হবে।
সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের জন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। অভিজ্ঞতা অর্জন ও আরও তথ্য সংগ্রহ করতে কমিটির সদস্যরা চলতি মাসের শেষদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে সাতটি দেশের সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক এমএমসি ফোরাম আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দেবেন।
ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক এমএমসি ফোরামের সদস্যরা বাংলাদেশের সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে যৌথভাবে খেলাপি ঋণ কিনতে পারবে। এতে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, চলতি বছরের আগস্টে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ম্যানিলাভিত্তিক বহুমুখী ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের খেলাপি ঋণ আদায় পদ্ধতি বিশ্বের অনেক দেশে সম্প্রসারণ করেছে। এই পদ্ধতি ওই সব দেশের খেলাপি ঋণ আদায়ে সহায়তাও করেছে।
আরও পড়ুন: খেলাপি ঋণ ঠেকাতে যত উদ্যোগ
দেশে সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের পর কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এর আগে, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ আর্থিক সংকটের সময় হিসেবে পরিচিত ১৯৯৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কীভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনেছিল, তা বিশ্লেষণ করে ওই কমিটি একটি সূত্র খুঁজে পেয়েছিল। ওই সাতটি দেশ হলো ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও ফিলিপাইন।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, আর্থিক সংকটের সময় ইন্দোনেশিয়ার খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের উপর চলে গিয়েছিল। কিন্তু, ২০১৭ সালে দেশটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ শতাংশেরও নিচে।
চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণের আগে পর্ষদকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। ঋণ বিতরণের আগে যাচাই-বাছাই না করলে কোম্পানি গঠন করেও খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকার রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আর মূলধন জোগান দেবে না। এখন থেকে খেলাপি ঋণ আদায় করে আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো করতে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারলে দেশে সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটের প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
এসই/একে