গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বৈঠকে ঋণের সুদহার ১ অংকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো ব্যাংক স্থায়ী আমানতের সুদ ৬ শতাংশের বেশি দেবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৯টি ব্যাংক স্থায়ী আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এদের মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ন্যাশনাল রয়েছে।
এছাড়া সাতটি ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের স্থায়ী আমানতের সুদহার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতারাতি স্থায়ী আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা কঠিন। এ জন্য তারা আমানতকারীদের ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুব রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমানতের সুদহার কমানো, এটা প্রত্যেক ব্যাংকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে আমরা যদি ৬ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ টেকসই করতে চাই, আমানতের সুদহার অবশ্যই ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমানতের সুদ ৬ শতাংশ হলে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমে আসলে তখন আমরা ৯ শতাংশ ঋণের সুদহার বাস্তবায়ন করতে পারব খুব সহজেই।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, এপ্রিলের আগেই আমরা স্থায়ী আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহকরা ৬ মাস এবং ১ বছর মেয়াদি আমানতের জন্য ৯ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ পাচ্ছেন।
আমরা অবশ্যই মার্চের মধ্যে সুদ কমিয়ে নিয়ে আসবো বলে জানান এএসএম বুলবুল।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক বর্তমানে তিনমাস মেয়াদী স্থায়ী আমানতের সুদ দিচ্ছে ৬শতাংশ। তবে ৬ মাস মেয়াদের জন্য ৬দশমিক ৫শতাংশ এবং ১ বছর মেয়াদী আমানতের জন্য ৭শতাংশ সুদ অফার করছে।
বাংলানিউজকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান বলেন, এপ্রিলের আগেই আমরা স্থায়ী আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করব। আমরা ইতোমধ্যে আমানতের সুদ কমিয়েছি। এছাড়া খুব শিগগির স্থায়ী আমানতের সুদ নতুন করে নির্ধারণ করব।
১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত তহবিল বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখতে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়।
স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধেক আমানত যাবে সরকারি ব্যাংকে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের পরিশোধিত মূলধনের সঙ্গে সরকারি তহবিল পাবে। তবে ৬ শতাংশের বেশি সুদ দিতে পারবে না।
এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, ঋণ এবং আমানতের সুদের হার ৯ থেকে ৬ শতাংশের সীমা ব্যাংকগুলোকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি করবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকগুলোর প্রচুর পরিমাণ অর্থ অনানুষ্ঠিক খাতে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমানতকারীরা টাকা রেখেও কোনো সুবিধা পাবেন না।
আহসান মনসুর বলেন, আমরা যদি মূল্যস্ফীতি এবং আমানত রাখতে ব্যাংকগুলোর আরোপিত চার্জের কথা বিবেচনা করি তাহলে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এতে ঋণ বিতরণকারীরা বেশি মুনাফার আশায় কো-অপারেটিভ সোসাইটি বা সমিতিতে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করবেন।
তবে এ ধরনের বিনিয়োগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এর আগে কয়েকটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
এসই/টিএ