ঢাকা: সার্কুলার দিয়ে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ফরহাদ বিন হোসেন নামে একজন বিনিয়োগকারী।
হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত রিট আবেদনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বেতন-ভাতা বাড়াতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশনা দিতে পারে না।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন ভাতা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের বিরুদ্ধে রিট দায়েরের কারণ জানতে চাইলে ফরহাদ বিন হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বেসরকারিখাতের ওয়ান ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারে আমার বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ে সার্কুলার দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তারা এটা দিতে পারে না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও বাংলাদেশ ব্যাংককে দেখতে হবে, যেটা দেখেনি। এটা একটা ভায়োলেশন।
বেসরকারিখাতের ওয়ান ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের এই বিনিয়োগকারী বলেন, অন্যান্য বেসরকারিখাতের কর্মীদের বেতনের সঙ্গে অসামঞ্জস্য করা হয়েছে। প্রত্যেকটা ব্যাংকের নিজস্ব রুলস-রেগুলেশন আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বেতন নির্দিষ্ট করে দেয়, তাহলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তো হাত বেঁধে দেওয়া হলো। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়ের হিসাব-নিকাশ আছে। তাদের এখতিয়ারে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করেছে।
ফরহাদ বিন হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে রেগুলেটরি পাওয়ার সে অনুযায়ী তারা এটা দিতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রধান দায়িত্ব পালন না করে এই সার্কুলার দিয়েছে। এতে আরও বোঝা তৈরি হয়েছে। কারণ ব্যাংকিংখাতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ আছে, মূলধন ঘাটতি আছে এগুলো দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। আমাদের মতো গ্রাহকদের সেবার বিষয় দেখাসহ আরও অনেক ব্যাপার আছে, যেগুলো রেগুলেটরি বডি হিসেবে তারা দেখতে পারে। সেখানে তারা কী করলো? একটি সার্কুলার দিয়ে কর্মীদের বেতন বাড়িয়ে দিল। এতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাবে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা কমে যাবে। এতে সমস্যা তৈরি হবে। এটা চিন্তা করলে সার্কুলারটি অসামঞ্জস্য। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক পাওয়ার এক্সারসাইজ করে যে কোনো আদেশ দিতে পারে। কিন্তু সেটার ভারসাম্য থাকতে হবে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মীদের জন্য বেতন বৃদ্ধির নির্দেশ দিল। আমার মতো বিনিয়োগকারীদেরও দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকেরই। সেটা না দেখে শুধুমাত্র কর্মীদের বেতনটা নির্ধারণ করে দিল। এতে কী হচ্ছে? বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান দায়িত্ব পালন না করে বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিল। যা বিনিয়োগকারীদের ওপর বোঝা তৈরি করবে। তাই একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে রিটটা করেছি।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ব্যাংক কর্মীদের সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে গত ২০ জানুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা সার্কুলারটি বাস্তবায়নে সময় চেয়ে গর্ভনরের সঙ্গে দেখা করেন। পরবর্তীতে ১ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করে আরও একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল থেকেই বাস্তবায়ন করতে হবে নতুন বেতন-ভাতা।
সার্কুলারে বলা হয়, ২০১৩ সালে লাইসেন্স প্রাপ্ত চতুর্থ প্রজন্মের সব তফসিলি ব্যাংক ও তৎপরবর্তীতে স্থাপিত সব তফসিলি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলের সাধারণ বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাসে ন্যূনতম বেতন-ভাতা ৩৯ হাজার টাকা এবং ক্যাশ কর্মকর্তাদের ন্যূনতম বেতন-ভাতা ৩৬ হাজার টাকা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এসই/এমএমজেড