ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে এখনও অনেক টাকা

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে এখনও অনেক টাকা ফাইল ছবি

ঢাকা: ব্যবসা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়া সত্ত্বেও কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষ অতিরিক্ত নগদ টাকা কাছে রাখছে। ফলে ব্যাংকের বাইরেও মানুষের হাতে নগদ টাকা বেশি রয়েছে।

আগেও এটা লক্ষ্য করা গেছে, ২০২০ সালের মার্চে দেশে মহামারি নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের চলাচল এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর যখন কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তখনও ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল।

বিশেষজ্ঞরা এবং ব্যাংকাররা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নিয়ন্ত্রিদ চলাচলের সঙ্গে সীমিত আকারের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকায় বিধি নিষেধের সময় মানুষের হাতে আরও নগদ অর্থ রাখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

তারা বলছেন হাতে বেশি পরিমাণ নগদ টাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অর্থের প্রচলন সীমিত করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ২৯৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।

করোনা মহামারি শুরুর দুই মাস আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা ছিল মানুষের হাতে।

তবে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর ধীরে ধীরে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১০ হাজার ৯৮৩ কোটি ৮লাখ টাকায়।

পরে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মানুষের কাছে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১লাখ ৮৫ হাজার ৭৪১ কোটি ৯ লাখ টাকায়।

২০২১ সালের জুলাই মাসে যখন দেশে আবারও কঠোর বিধিনিষেধ ছিল তখন মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ফের বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৪২ কোটি ৯ লাখ টাকায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সাধারণত ব্যাংকে তারল্যের পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়লে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। মনে হচ্ছে মার্কিন ডলারের বিক্রি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য কমাতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে এবং বিক্রির ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ২৭ হাজার কোটি নতুন টাকা ছাপা কম হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ বেশি থাকার ফলে অর্থ সরবরাহের বৃদ্ধি কম ও অর্থ গুণক প্রভাব কম হবে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, যখন ব্যাংকের বাইরে মুদ্রার পরিমাণ বা হাতে নগদ টাকা ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৮৩ কোটি, তখন অর্থ গুণক ৫ দশমিক ১৬ এর বিপরীতে ২ লাখ ৫০ হাজার ৯১১ দশমিক ৯০ কোটি টাকা।

যাই হোক, ২০২১ সালের জুন মাসে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭১ দশমিক ৮৯ কোটি টাকার রিজার্ভ অর্থের বিপরীতে অর্থ গুণক ৪ দশমিক ৪৮ -এ নেমে আসে যখন ব্যাংকের বাইরে অর্থের পরিমাণ বা হাতে নগদ ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ৫১৭ দশমিক ৭০ কোটি টাকা।

২০২১ সালের নভেম্বরে ব্যাংকের বাইরে নগদ ২ লাখ ৮ হাজার ২৯৬ দশমিক ৪ কোটি টাকা হওয়ায় মানি মাল্টিপ্লায়ারটি ৪ দশমিক ৮২-এ দাঁড়িয়েছিল।

করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন আকারে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করায় ২০২১ সালের নভেম্বর শেষে নতুন টাকা ছাপানোর পরিমাণ  দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ১৭ দশমিক ০৬ কোটি টাকায়। যা ২০২০ সালের মার্চ মাসে ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫২ দশমিক ৩০ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলেছেন, অর্থগুণক ইস্যু ছাড়াও, নগদে লেনদেন অবৈধ অর্থ লেনদেনের সুবিধার সঙ্গে সরকারের কর সংগ্রহকে বাধা দেয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে যত বেশি টাকা থাকবে, তত বেশি টাকা নগদে লেনদেন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
এসই/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।