ঢাকা: ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের (সিজিএস) আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও এখন পর্যন্ত সেখান থেকে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা, যা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের।
শনিবার (১২ নভেম্বর) মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমইদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভবনা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, কোভিড মহামারি পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপতি নানাবিধ অরোধের কারণে গোটা পৃথিবীর সাপ্লাইচেন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে।
তিনি বলেন, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও আজ পর্যন্ত সেখান থেকে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে ঋণ প্রাপ্তির এ হার বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি এ খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও প্রতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে সেবা এবং উৎপাদনশীল খাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচেছ, যার ফলে পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের মাধ্যমে দাম কমে আসবে এবং বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এসএমই খাতে অর্থায়ন বাড়াতে ব্যাংকগুরোকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ‘উপ-শাখা’ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এছাড়াও ঋণ প্রাপ্তির প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে ‘অনলাইন মার্কেট প্লেস’ এবং ‘ব্লক চেইন’ কার্যক্রমে বেশি হারে মনোনিবেশের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি ক্লাস্টারকে নির্বাচন করে দিয়েছে এবং দেশের ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে উক্ত ক্লাস্টারভুক্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সিএমএসমএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’স্থাপনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করেছে।
কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বড় শিল্পখাতকে সহযোগিতা দেওয়া এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদিও আর্থিক এবং নীতি সহয়তার অভাবে এ খাতের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
তিনি উল্লেখ করেন, আর্থিক খতিয়ান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক নথিপত্রের ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের সিএমএস খাতের উদ্যোক্তারা প্রয়শই ব্যাংকের ঋণ সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এ অববস্থায় তাদের প্রযুক্তিগত, কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা একান্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য দেশের স্বনামধন্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রাপ্তির তথ্যগুলো সন্নিবেশনের মাধ্যমে ঢাকা চেম্বার ‘সিএমএসএমই ঋণ প্রাপ্তির পদ্ধতি’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে, যেটি এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. জাকের হোসেইন বলেন, বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান ২৫% এবং ২০২৪ ও ২০২৭ সালে এটি যথাক্রমে ৩২% ও ৪০% উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এ খাতের উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এখাতের কোনো উদ্যোক্তা যদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র সমেত ঋণ আবেদন করলে, তা মঞ্জুরে ব্যাংকের পিছপা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, ‘বিবিএস ইকোনোমিক সার্ভে ২০১৩’ অনুযায়ী দেশে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭.৮ মিলিয়ন। যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংই ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত ধ্যাণ-ধারণা ও মানসিকতা ছাড়তে হবে।
এছাড়াও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসএমই উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আহরণের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) মো. জাকের হোসেইন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার পৃথকভাবে দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
এসএমএকে/এমএমজেড