ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝড় দেশের অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে। সংকটে পড়েছে মানুষের জীবন ও জীবিকা।
খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের এ উদ্যোগ দৃশ্যমান হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন আরও জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কথা অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তা কাকে দেওয়া হচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে- এগুলো দেখতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখার দরকার, সুপারভিশন হচ্ছে কি না। শুধু কাগজপত্র ঠিক রেখে ঋণ দেওয়া হয়। বাস্তবে এ ঋণ কোথায় যাচ্ছে-এগুলো ব্যাংকও দেখে না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও একক ঋণ হিসাবের সব ঋণ দেখা কঠিন। তবে আজকাল ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটা দেখা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন এই সাবেক গভর্নর।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হলো, বারবার রিসিডিউল (পুনঃতফসিল)। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে বারবার রিসিডিউল করে নেয়। এগুলো রোধ করার জন্য শক্ত অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয় আগামীতে এ ব্যাপারে সবাই আরও শক্ত অবস্থান নেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ যাবৎকালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ। এ সময়ে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ হিসাব ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করেছে চলতি নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখে।
এ হিসেবে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৬০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
করোনা মহামারির অভিঘাত মোকাবেলায় ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেয় সরকার। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ ফেরত না দিলেও খেলাপি হবে না; এমন সুবিধাসহ নানা সুবিধা ছিল বিশেষ প্যাকেজের মধ্যে। তারপরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অবশ্য ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, করোনার যুদ্ধ পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যকে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
আইএমএফের মতে, এখন উচ্চ খেলাপি ঋণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ। বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশ অতিক্রম করেছে। নানারকম সুবিধা পাওয়ার পরও এ হার। আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি দেওয়ার আগেই খেলাপি ঋণ কমানো ও ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পদক্ষেপ দেখতে চায়।
আইএমএফের ঋণ দেওয়ার প্রাথমিক সম্মতির দিনই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আমরা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কমিটি করব। আমরা আগেও এ উদ্যোগের কথা বলেছি, শিগগিরই এ ব্যাপারে আইন তৈরির কাজ শুরু করব।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনে ইতোমধ্যে প্রাক কাজগুলো শুরু হয়ে গেছে।
খেলাপি ঋণ কমাতে ম্যানেজমন্ট কোম্পানির ব্যাপারে সরাসরি একমত না হলেও আর্থিক খাতের দুষ্টক্ষত খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সরকারের ইচ্ছার সঙ্গে একমত দেশের ব্যবসায়ী নেতারাও। তারা বলেন, খেলাপি ঋণ শুধু আইএমএফের শর্তের কারণে কমাতে হবে এমন না, আর্থিক খাতের সক্ষমতার জন্যও খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। বেশি নন-পারফমিং ঋণ ব্যাংকের বোঝা হয়ে গেছে।
তারা বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক সুদ হার কমাছে না। সুদহার বাড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো, যা বহন করতে হয় উদ্যোক্তাদের। খেলাপি ঋণ কমলে, সুদ হারও কমবে। আর এতে সুবিধা পাবেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
জেডএ/এমএমজেড