ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

দাম বেড়েছে বইয়ের, পাঠক চান সমন্বয়

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
দাম বেড়েছে বইয়ের, পাঠক চান সমন্বয় ছবি : জিএম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: বই হাতে নিয়ে খুলে দাম দেখেই রেখে দিলেন মিরপুর থেকে আসা স্কুল শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। নিজে পড়ার জন্য দেড় হাজার টাকা বাজেট নিয়ে মেলায় এসেছেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির শিশু চত্বর থেকে সন্তানের জন্য কার্টুন আর কমিকস্ কিনেই যাচ্ছেন ফিরে।

মেলা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, আমি প্রতিবছরই মেলায় আসি। প্রতি মেলায় একাধিকবার এসে বাজেট অনুযায়ী বই কিনি। সন্তানের জন্যও শিশুতোষ বই কিনি। এবার এসে দেখি পছন্দের বইগুলোর দাম অনেক চড়া।

অন্যদিন এসে নিজের জন্য বই কিনবেন জানিয়ে তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় শুধু বাচ্চার জন্য বই কিনেছি।

মেলায় বিভিন্ন স্টলে ঘুরে দেখা যায়, দাম দেখে কেউ কেউ মলাট বন্ধ করে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তবে দাম বেশি হওয়ায় যে বই বিক্রিবাট্টা চলছে না তাও নয়। বেশি দাম দিয়ে যারা বই কিনছেন তারা প্রকাশকদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

দাম বৃদ্ধিতে পাঠকের এমন অসন্তুষ্টি নিয়ে কথা হয় রোদেলা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী রিয়াজ খানের সঙ্গে। বইয়ের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বর্তমানে সবকিছুরই দাম বাড়তি। তাই বইয়ের দামও সঙ্গতি রেখে বাড়ানো হয়েছে।

তবে অস্বাভাবিকভাবে বইয়ের দাম বাড়ানো হয়নি বলে তার দাবি।

পাঠকদের প্রত্যাশা, বাজারদর অনুযায়ী মধ্যবিত্ত পাঠকের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে থাকা উচিত। কারণ বইয়ের দামের ওপর বিক্রিও নির্ভর করে।
বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের স্টলগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গতবারের চেয়ে এবার বইয়ের দাম বেড়েছে।

জনপ্রিয় কবি লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখকের গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা, ভ্রমণ ও শিশুসাহিত্য সব ধরনের বইয়ের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশু কর্নারে যতগুলো শিশুদের বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে তাদের বেশির ভাগ বইয়ের দাম এবার কয়েকগুণ বেড়েছে।

৩ ফর্মা অর্থাৎ ২৪ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মূল্য একশো টাকা। গতবছর এই বইয়ের মূল্য ছিল ৬০ টাকা। রঙিন ছবিসহ ৫৬ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মূল্য দুইশো পঞ্চাশ টাকা। গতবছর ছিল ১৭০ টাকা।

শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস ও কবিতার বইয়ের দামও এবার বেশ চড়া। জনপ্রিয় একজন লেখকের ২৫০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের দাম ৪০০ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে বিক্রি হচ্ছে তিনশো টাকায়। গতবার এই পৃষ্ঠা সংখ্যার বইয়ের দাম ছিল ২০০ টাকা।

একজন জনপ্রিয় লেখকের ৬৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মূল্য ১৭০ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে সেই বই ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবার এই পৃষ্ঠা সংখ্যার বইয়ের দাম ছিল ১২০ টাকা। ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ১০০ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ১২৫ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে সেই বই বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।

বুধবারের বইমেলা
গ্রন্থমেলার ১১তম দিনে ছুটির দিন না হওয়ার পরও অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়েই মেলায় আসেন। মেলার প্রায় প্রতিটি স্টলে সববয়সী দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা যায়। কেউ বই কিনছেন আবার কেউ দেখছেন নতুন বই। আবার অনেকেই বিভিন্ন স্টল ও কবি-লেখকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় ছবি তুলছেন।

বিভাস প্রকাশনীর প্রকাশক রামশংকর দেবনাথ বলেন, মেলায় বইয়ের বিক্রি ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে এরই মধ্যে মেলায় বইয়ের বিক্রি রেকর্ড ছাড়িয়ে যেত।

নজরুল মঞ্চের চিত্র
বুধবার মেলার নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচন হয় ছয়টি বইয়ের। এর মধ্যে শাহ আলমগীর মোড়ক উন্মোচন করেন নন্দিতা থেকে প্রকাশিত শামীম পারভেজের ‘হৃদয়ের কথা’, শিমূল মুস্তাফা উন্মোচন করেন ইউনিভার্সাল একাডেমি থেকে প্রকাশিত শিমুল পারভীনের ‘দেখতে আমি পাইনি তোমায়’। প্রাবন্ধিক আবুল মকসুদ উন্মোচন করেন মাহবুব কামালের ‘জাত নিমের পাতা’।

১১তম দিনে ১০৭ বই
একাডেমির তথ্যকেন্দ্র এবং সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মেলার একাদশ দিনে নতুন ১০৭টি বই এসেছে। এর মধ্যে- গল্প ২২, উপন্যাস ১৬, প্রবন্ধ ৭, কবিতা ২০, গবেষণা ২, ছড়া ৩, জীবনী ১, মুক্তিযুদ্ধ ৩, বিজ্ঞান ৩, ইতিহাস ২, রাজনীতি ২, স্বাস্থ্য ১, অনুবাদ ১, বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনী ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর বই এসেছে ২৩টি।

এর মধ্যে- নান্দনিক থেকে এসেছে আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘একদিন সব কিছু গল্প হয়ে যায়’, চরম উদাসের ‘এসো নিজে করি’, ঐতিহ্য  থেকে আসাদুল ইসলামের ‘আটলান্টিক হাসির নির্ঘুম বিদ্যুৎ’, অ্যাডর্ন  থেকে আবদুস সালাম মামুনের ‘উপমহাদেশের আইন ও শাসনের ইতিহাস’, মাওলা ব্রাদার্স থেকে শাহাদুজ্জামানের ‘গল্পসমগ্র ১’, পাঠসূত্র  থেকে এসেছে শোয়ায়েব মুহামদের ‘ঘুড়িযাত্রা’, দিব্যপ্রকাশ  এসেছে মঈনুল আহসান সাবেরের ‘কারণজল’, অনিন্দ্য প্রকাশ  থেকে এসেছে অরুণ চৌধুরীর ‘সুখ সখিগণ’, অনন্যা  থেকে  মুনতাসীর মামুনের ‘লড়াই চলছে লড়াই চলবে’, শাহাবুদ্দীন নাগরীর ‘তাপসী’, সময় প্রকাশন  এসেছে কামাল চৌধুরীর ‘উড়ে যাওয়া বাতাসের ভাষা’, চন্দ্রদীপ থেকে আলী ইমামের ‘অপারেশন কুয়াকাটা’, জয়তী থেকে আন্দালিব রাশদীর ‘সাতাশ বছর পরে’, পালক থেকে কাওসার রহমানের ‘কালো টাকার সন্ধান’ উল্লেখযোগ্য।

মূলমঞ্চের আয়োজন
বুধবার বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের নব্বইতম জন্মবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক এম এম আকাশ, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার এবং সুভাষ সিংহ রায়। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।  
 
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল আবৃত্তি সংগঠন ‘ক’জনা’ মো. সুলতান হোসেন-এর পরিচালনায় ‘মাটির সুর সংগীত পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ফারভীন, আকরামুল ইসলাম, সেলিম চৌধুরী, বদিয়ার রহমান, আবদুল লতিফ সাঁই, সফিউল আলম রাজা, শিপ্রা ঘোষ, জসীম উদ্দীন সজল।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ঘোষণা
প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পরিচালিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৪ পেয়েছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকবাল হাসান এবং লেখক ও চিত্রশিল্পী সৈয়দ ইকবাল। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা।

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠান
বৃহস্পতিবার ১২তম দিনে বইমেলার দুয়ার খুলবে বেলা ৩টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘শিশুসংগঠক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের নব্বইতম জন্মবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন। আলোচনায় অংশ নেবেন মাহবুব তালুকদার, আলী ইমাম, লুৎফর রহমান রিটন এবং প্রত্যয়। সভাপতিত্ব করবেন শিল্পী হাশেম খান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫

** ১০ দিনে বাংলা একাডেমির বিক্রি ৩৬ লাখ টাকা
** ‘বই হাতে বাড়ি নেই মেলার আমেজ’
** মেলায় মাহবুব কামালের ‘জাত নিমের পাতা’
** বইয়ের পেটে পাঠক লেখক প্রকাশক!
** মেলায় ‘তোমার সঙ্গে বহুদূর’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।