ঢাকা: কবি ফারুক আহমেদের কবিতা পড়লে নিজের মনের মধ্যে আলাদা একটা মনোভাব পেয়ে বসে। নাগরিক জীবন, আধুনিক সভ্যতা, মমতা, পরিবারের মতো বিভিন্ন বিষয় রূপকার্থে উঠে আসে তার কবিতায়।
বুধবার (২ মার্চ) বিকেলে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে কবি ফারুক আহমেদের কবিতার বই ‘উপমাজংশন’র প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রকাশনা উৎসবের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, কবি ফারুকের আহমেদের কবিতার ঢং হলো, তিনি খুব দীর্ঘ কবিতা লেখেন না। আমাদের পরিকল্পনার ভাষায় স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কবিতা। আমার কাছে কবিতা অনুভবের, অনেকে গান গাইতে না জানলেও গান পছন্দ করেন, সেরকম।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, কবির কবিতা পড়লে নিজের মনের মধ্যে আলাদা একটা মনোভাব পেয়ে বসে। আরেকটি বড় বিষয় হলো—উপমা, কবিতার অলংকার। সেই অলংকার ব্যবহারে তিনি খুবই পারদর্শী। এই উপমা ব্যবহার করেই জীবনানন্দ দাশ এত জনপ্রিয় হয়েছিলেন। নাগরিক জীবন, আধুনিক সভ্যতা, মমতা, পরিবার ইত্যাদি বিষয়গুলো রূপকভাবে উঠে এসেছে তার এই উপমাজংশন কাব্যগ্রন্থে। নবীন এবং প্রতিশ্রুতিশীল এই কবিকে আমার অভিনন্দন।
প্রকাশনা উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক ও কবি জুয়েল মাজহার, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক আন্দালিব রাশদী, কবি সৌরভ জাহাঙ্গীর এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য লায়ন মো. কেফায়েত উল্লাহ।
আয়োজনে কবি জুয়েল মাজহার বলেন, বইটির নামের মধ্যেই একটি আলাদা ব্যাপার আছে। উপমাজংশন—নামটাই অদ্ভুত! সবগুলো উপমাকে একটি জংশনে এনে দাঁড় করিয়েছেন যেন তিনি। আমার অভিজ্ঞতায় যতটুকু দেখেছি, ভালো বইগুলোর নামগুলোও খুব ভালো হয়। এটিও তেমন।
তিনি আরও বলেন, ফারুক আহমেদ কবিতায় খেলা করেন কিন্তু সহজে পাঠককে সেটি বুঝতে দেন না। তিনি আটপৌরে ভাষার মাধ্যমে আভিধানিক অর্থ থেকে বের করে আনেন কবিতাকে। শব্দকে অন্য জায়গায় নিয়ে অর্থকে টুইস্ট করার একটা ব্যাপার আছে তার কবিতার মধ্যে।
এছাড়া তার কবিতায় রয়েছে সহজিয়া ঢঙের ব্যঞ্জনাময় গাঁথুনি। এটা তিনি অবলীলায় করে ফেলেন। কবিতায় ‘রিজন অব ম্যাডনেস’ তৈরি করেন এই কবি, যা পাঠককে সহজেই কবিতার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে, যোগ করেন কবি জুয়েল মাজহার।
কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক আন্দালিব রাশদী ‘উপমাজংশন’ থেকে পাঠ করে শোনান ‘নিরর্থক দিনলিপি’ শীর্ষক কবিতা।
কবি ফারুক আহমেদ নিজের ‘উপমাজংশন’ কাব্যগ্রন্থ প্রসঙ্গে বলেন, উপমাজংশনের ক্ষেত্রে আমি যে কাজটি করেছি, তা হলো—আমাদের বাংলাসাহিত্যে ছন্দের ব্যাপারে মধুসূদন দত্তের পর রবীন্দ্রনাথ প্রচুর কাজ করেছেন। আমাদের পূর্বসুরি কবিরাও অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু এই সময়ে এসে ছন্দের তুলনায় কবিতার অন্যান্য অনুষঙ্গের ব্যাপার যেটা—অলংকার, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্পের খেলাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়। উপমা, শব্দ, নতুন ধরনের দৃশ্য তৈরি করা এখন আমাদের কবিতায় অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। সেদিক থেকে উপমাজংশনে ছন্দের তুলনায় অলংকারের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশনা উৎসবের এই আয়োজন সঞ্চালনা করেন কবি ফারুক আহমেদের বন্ধু ডা. আনিসুর রহমান। কেক কেটে প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন সম্পন্ন হয়। বইটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য, প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। মূল্য: ১৫০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ