২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন মিলে বাজেটের আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’- স্লোগানে অর্থমন্ত্রী মুহিত বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। বর্তমান সরকারের নবম এবং অর্থমন্ত্রী মুহিতের ১১তম বাজেট এটি।
অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭.৪ শতাংশ, বছরের শেষে মূল্যস্ফীতির হার হবে ৫.৫ শতাংশ। সুদের হার ক্রমহ্রাসমান ধারা স্থিতিশীল থাকবে। বাজেটে কর-রাজস্ব আয় ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
আগামী বছরে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি হবে জানিয়ে মুহিত বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কারণে এই ঘাটতি বাড়বে। তবে শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধির ফলে সামস্টিক অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
দশটি ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থায়ন নিশ্চিত এবং বাস্তবায়নে নিবিড় পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান মুহিত।
বাজেটে অর্থায়নের উৎস হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৬২ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। যা গত বাজেটের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি।
এ বছর মূল্য সংযোজন কর ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ, আমদানি শুল্ক ১২ দশমিক ১ শতাংশ, আয়কর ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
আর বাকি অর্থের মধ্যে বৈদেশিক অনুদান ১ দশমিক ৪ শতাংশ, বৈদেশিক ঋণ ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৫ দশমিক ১ শতাংশ, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বহির্ভূত কর ২ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতার শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধকালীন শহীদ এবং পঁচাত্তরে সকল শহীদদের স্মরণ করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থনৈতিক সাফল্যের এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে এবারের বাজেট ঘোষণা করছি জানিয়ে মুহিত বলেন, আমাদের দ্বিতীয় মেয়াদে এটাই সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আগামী অর্থবছরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে এবারের বাজেটে নতুন কোনো দিক নির্দেশনা বা দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ কম থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭৪ সালে আমাদের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ, মতান্তরে ৯.৬ শতাংশ। আজ বলতে দ্বিধা নেই, প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকতো তাহলে আমরা ১৯৯৬-৯৭ সালেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতাম। আর এখন আমাদের অবস্থান থাকতো অনেকটা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। দেশি-বিদেশি হাজারো ষড়যন্ত্রের মুখেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যখন অপ্রতিরোধ্য, তখন ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তার সূচিত গণমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অপ্রতিরোধ্য ধারা আকস্মাৎ রুদ্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসলে গৌরবের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় বলে জানান মুহিত। তিনি বলেন, পূর্ব এশিয়ার আর্থিক সংকটের মুখেও দেশের অর্থনীতি থাকে সুসংহত।
দেশের অগ্রযাত্রা ২০০১ সালে আবারও হোঁচট খায় জানিয়ে মুহিত বলেন, বিএনপি জোট সরকারের আমলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত এবং বেকারত্ম বেড়ে যায়। তাদের তাণ্ডবে দেশ মহাসংকটে পতিত হয়।
এ অবস্থায় ‘দিন বদলের সনদ’ নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ২০০৯ সালের শুরুতে সরকার গঠনের পর বিপুল সফলতার মধ্যে ২০১৫ সালের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। এখন এসডিজিতে পদার্পণ করি। এজন্য লিড ও সহায়ক মন্ত্রণালয়গুলোকে চিহ্নিত করে কার্যাক্রম শুরু হয়েছে।
স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুহিত বলেন, বিগত আট বছরে অর্থনীতির অগ্রযাত্রার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। পদে পদে আঘাত এসেছে। রাজনৈতিক প্রতিবাদের নামে সহিংস সন্ত্রাসের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সম্পদ ধ্বংস ও জীবনহানি হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে ভীতি প্রদর্শন ও মৌলবাদী মক্তিকে উসকে দেওয়া হয়েছে।
“কিন্তু কুচক্রী মহলের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়রূপে অটল হিমালয়ের মতো চির উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, কর্মসৃজন, খাদ্য উৎপাদন, আমদানি-রফতানি কোনো সূচকে আমরা পিছিয়ে নেই। ”
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ও বিভিন্ন পুরস্কার প্রাপ্তির কথা তুলে ধরে মুহিত বলেন, বিশ্বব্যাপী ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হচ্ছে।
বাজেট প্রণয়নের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সুধীজনের মতামত গ্রহণসহ প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা ও প্রাজ্ঞ মতামত পাওয়ার কথা জানান মন্ত্রী। তার উপর অবিচল আস্থা রাখায় কৃতজ্ঞতা জানান।
২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অনেক দূরে এগিয়ে এসেছি জানিয়ে মুহিত বলেন, প্রাণ-প্রাচুযে ভরা উদ্যমী ও মননশীল তরুণ জনগোষ্ঠী এখন নতুন উদ্যমে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে রয়েছে। তাই সমৃদ্ধির মহাসড়কে এই নিরন্তর অভিযাত্রা আমাদের চলবেই এবং চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতেই থাকবে।
“সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ