ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

বাজেট ২০১৭-১৮: অগ্রযাত্রার মহাপরিকল্পনা

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৭
বাজেট ২০১৭-১৮: অগ্রযাত্রার মহাপরিকল্পনা

ঢাকা: বাজেট ২০১৭-১৮কে একটি অগ্রযাত্রার মহাপরিকল্পনা হিসেবেই তুলে ধরলেন অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত। কেবল একটি বছরেরই নয়, আগামী বছর কিংবা দশকগুলোতে দেশ কোন পথে এগিয়ে যাবে তারই একটি চিত্র তিনি তুলে ধরলেন নতুন অর্থবছর সামনে রেখে। 

বাজেট বক্তৃতায় মানবসম্পদ উন্নয়নে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মান, বিজ্ঞানভিত্তিক উচ্চশিক্ষার প্রসারে জোর দিয়েছেন। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় নিয়ে আসা, গ্যাসের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।

যোগাযোগ অবকাঠামোয় মহাসড়ক, রেলপথ, সেতুনির্মাণ, আকাশ পরিবহন বাড়ানোর পাশাপাশি জোর দিয়েছেন ই-টিকেটিং ব্যবস্থায়। পানি সম্পদের উন্নয়ন জীবন ধারণের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং কৃষি উন্নয়নে পানিসম্পদের টেকসই উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
 
এই পরিকল্পনার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে জনকল্যাণের কথা। যাতে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহের কথা রয়েছে, দুর্যোগ দুর্দশায় ত্রাণের কথা রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তায় দিয়েছেন বিশেষ জোর।
 
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী তাই নারীকে ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয় সে অনুধাবন থেকে আর - বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ কাজী নজরুলের সেই অমর বাণী স্মরণ করে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় নারীকে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রাজনীতি, ব্যবসাসহ সকল শ্রেণিপেশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
 
উন্নয়নের কথা অগ্রগতির কথা বলতে গিয়ে অতীতকে ভুলে যাননি অর্থমন্ত্রী। এই পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংরক্ষণের কথা জানিয়ে তার জন্যও রেখেছেন পর্যাপ্ত বরাদ্দ।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে এই উন্নয়ন পরিকল্পনায়।  

যে অগ্রযাত্রার কথা বলা হচ্ছে তা ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। তাই অর্থমন্ত্রী মুহিত তথ্য-প্রযুক্তির সেবার উন্নয়নের কথা বলেছেন। আইসিটি অবকাঠামোর দ্রুত প্রসারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। দেশে ১২টি আইটি পার্ক গঠন ও সাতটি স্থানে আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবিশন সেন্টার স্থাপনের কথা জানিয়েছেন। বলেছেন ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত উচ্চগতির ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণের কথা।  
  
অর্থনীতিতে কৃষি নির্ভরতা কমে আসলেও এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষ এখনও কোনও না কোনওভাবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত তাই শিল্পের প্রসার যতই হোক কৃষি জমি সংরক্ষণ করতে হবে, বলেছেন তিনি। কৃষি উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা, ও গবেষণালব্দ জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার এবং কৃষক সেবা দিতে সেবাকেন্দ্র গঠনের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। যোগাযোগের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলকেও উন্নয়নের মহাসড়কে সংযুক্ত করার পথ বাতলেছেন তিনি। একটি বাড়ি একটি খামার কর্মসূচির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
 
শিল্পের প্রসারের প্রেক্ষাপটে শিল্পউন্নয়ন ও বাণিজ্যে জোর দিয়েছেন অর্মমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশে শিল্পসহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শিল্পায়নের গতিকে বেগবান করাই আমাদের লক্ষ্য। ’

আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ঐতিহ্যের প্রতীক সোনালী আঁশনির্ভর পাট ও বস্ত্র শিল্প তরান্বিত করার কর্ম-পরকিল্পনা দিয়েছেন। বাণিজ্য সম্প্রসারণে জোর দিয়েছেন নতুন নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টির ওপর। আর বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে জোর দিয়েছেন সমন্বিত কর্মকাঠামোর ওপর।
 
উন্নয়নে আগে থেকে আঞ্চলিক উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার জোর দিয়ে আসছে সরকার। এই বাজেটেও তার প্রতিফলন রেখেছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। নতুন নতুন দেশে শ্রম ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য যেমন উদ্যোগ রয়েছে, বিশ্বের দেশে দেশে মেলা আয়োজন করে এবং আন্তর্জাতিক মেলাগুলোতে অংশ নিয়ে এই তৎপরতা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।  

জলবায়ূ পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের ওপর প্রকট, কিন্তু তা সমাধানে নিজেকেই সক্ষম হতে হবে, অতীতের সেই অবস্থানেই বাংলাদেশ এবং সে সক্ষমতা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সে লক্ষ্যে নিজস্ব বিনিয়োগ পরিকল্পনা (কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া স্বল্প-কার্বন নিঃসরণযোগ্য উন্নয়নের কথাও বলেছেন তিনি। দেশে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে নতুন বনায়নেরও উদ্যোগের কথা রয়েছে এই বাজেট বক্তৃতায়।  

এত কিছুর পরেও দেশে হতে হবে আরও নগরায়ন, যা হবে পরিকল্পিত। নগর ব্যবস্থার যে মহাপরিকল্পনা আগেই নেওয়া হয়েছে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে এই বাজেটেও। নগরে স্বস্তির আবাসন, যানজটমুক্ত জীবনের কথা বলেছেন তিনি। যার জন্য মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো ভৌত অবকাঠামোর পাশাপাশি প্রশিক্ষণসহ সচেতনতা বাড়ানোর অন্যান্য কার্যকর উদ্যোগের কথা বলেছেন।  

দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সম্মৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন উদ্যোগের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। নাগরিক জীবনের মান উন্নয়নে তথ্যসেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। দেশের জেলা-উপজেলায় একটি করে মসজিদ স্থাপনের তথ্য যেমন দিয়েছেন, তেমনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন মুহিত।  

সকল কিছুর ওপর জননিরাপত্তা। মানুষের সুখে-শান্তিতে বসবাসের জন্য চাই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। সে বিষয়টিও স্থান পেয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। দেশে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃংখলাবাহিনীর দক্ষতা ও অস্ত্র-শস্ত্র, প্রযুক্তিনির্ভর সরঞ্জামাদি সংযোজনের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। দেশের সকল বাহিনীর আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখার কথাই জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময় ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
এমএমকে  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।