ঢাকা: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হলো- সুন্দরবন। বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অন্যতম আবাসস্থল এই সুন্দরবন।
সুন্দরবনে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা মাত্র একশ ৬টি। এর আগে এই সংখ্যা ছিল চারশ।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম (প্রতিবেশ) সুরক্ষায় বাঘের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু পাচারকারীদের হাতে বাঘের মৃত্যু, খাদ্যের অভাব, বাসস্থানের সংকটের কারণে বাঘ কখনো কখনো লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এ সময় গ্রামবাসীর হাতে মৃত্যুসহ বিভিন্ন কারণে বাঘের সংখ্যা হ্রাস, রোগব্যাধি বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাঘের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে।
বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এর অস্তিত্ব টিকে রাখতে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এ সময় ১১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও বাস্তবায়নে সভা, সেমিনার ও পেপার ওয়ার্কিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল প্রকল্পটির কাজ।
বর্তমানে নতুন উদ্যোগে শুরু হচ্ছে প্রকল্পের কাজ। এ জন্য ‘বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় বাঘ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে।
প্রকল্পটির আওতায় বাঘ সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি ও কারিগরি পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সুন্দরবনের বাঘ এবং আবাসস্থল সংরক্ষণ, বন অধিদফতরের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট (ডব্লিউসিসিইউ) শক্তিশালীকরণ, কমিউনিটিভিত্তিক বন্যপ্রাণী শিকারবিরোধী পাইলট মডেল তৈরি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়ে বাঘ সংরক্ষণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সংঘাতনিরোধী মনিটরিং সিস্টেম তৈরি, সুন্দরবন এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক কাজ করা।
এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনূস আলী বলেন, সুন্দরবনের বাঘ বর্তমানে হুমকির মুখে। বাঘের সংখ্যা যাতে করে আর না কমে আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, সেই লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ হবে।
তিনি বলেন, বাঘ যাতে শব্দহীনভাবে নিরাপদে সুন্দরবনে বসবাস করতে পারে, সেই লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কিছু নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে।
বাঘের প্রজননের বিষয়ে তিনি বলেন, বাঘ ও বাঘিনীর ম্যাচিংয়ের সময় নিরাপদ ও শব্দহীন স্থান দরকার। কিন্তু বাঘ সুন্দরবনে সেটা পাচ্ছে না। সে কারণে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বাঘের সংখ্যা হ্রাসে প্রধান বন সংরক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনে অনেক ডাকাত থাকে। এদের দমনে পুলিশকে বার বার বলা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রকল্পের আওতায় কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে, যাতে করে ডাকাত দলকে ভিন্ন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সুন্দরবন থেকে বিদায় করা যায়।
তিনি আরো জানান, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সিমেন্টবাহী জাহাজ, তেলবাহী ট্যাংকার ও কার্গো জাহাজ চলাচল করে। এসবের কারণে সুন্দরবনে অস্বাভাবিক হারে বাঘ কমে যাচ্ছে।
এদিকে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাঘ সংরক্ষণের সঙ্গে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সে কারণে গবেষণা, জ্ঞান, ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাঘ ও এর আবাসস্থল সংরক্ষণে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাত ‘জিরোটলারেন্স’-এ নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া সুন্দরবনের বাঘের আবাসস্থলকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে এখানে বসবাসরত মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থাও করা হবে। এ সব কার্যক্রম বন অধিদফতর এবং ওয়াইল্ডটিম যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্প ব্যয়ের ১১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার মধ্যে ৪০ ভাগ ব্যয় করা হবে পরামর্শক এবং বিভিন্ন স্টাডি বাবদ।
এ বিষয়ে বন অধিদফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনের বাঘ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণায় জ্ঞানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে পরামর্শকের সহায়তায় অনেকগুলো গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে এ জ্ঞানের ঘাটতি দূর করা সম্ভবপর হবে।
আইএমইডি সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বাঘের সঙ্গে তুলনা করা হয়। বাঘের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে আমরা বিভিন্নভাবে পরিচিত। অথচ সুন্দরবনে বাঘ কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এ প্রকল্পটি এক বছর আগে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বন অধিদফতর এতদিন হয়ত পেপার ওয়ার্ক করেছে। বর্তমানে অধিদফতর মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫
এমআইএস/এবি