সিলেট: সিলেটের জাফলংয়ে বন বিভাগের সবুজ বনায়ন উজাড় করে কয়লা-পাথরের ‘ডাম্পিং ইয়ার্ড’ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ১৪ একর ভূমি দখল করে নিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় বিট কর্মকর্তার যোগসাজশে সবুজ বনে এমন ধ্বংসলীলা চালানো হচ্ছে। আর এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের নেপথ্যে থেকে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা শেল্টার দিচ্ছেন বলেও বলে অভিযোগ রয়েছে।
বন বিভাগের এসব ভূমি রক্ষায় শুধু মামলা করা ছাড়া কার্যকরী কোনো প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়নি আজ পর্যন্ত। যোগাযোগ করা হলে বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরাও এক ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন- উচ্ছেদে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এসব ঘটনায় অর্ধশত মামলাও করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সিলেটের তামাবিল শুল্ক স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে জাফলং মামার দোকান সড়কের দুই পাশে সবুজ বনায়ন বা গ্রিন পার্কের গাছ উজাড় করে বসানো হয়েছে ক্রাসার মেশিন। পাশাপাশি গাছ কেটে করা হয়েছে খালি ময়দান। যা দখলে নিয়ে কয়লা-পাথর ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি করে কয়লা পাথর মজুত করে চলেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, রাতের আঁধারে বন উজাড় করে কয়লা পাথর রাখার স্থান তৈরি করে নেন স্থানীয় অসাধু কতিপয় ব্যবসায়ী। তারা ক্ষমতাসীন নেতা ও পুলিশকে আঁতাত করে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্ষমতাসীনদের অনেকে বন উজাড় জায়গা দখল নিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় মাসোহারা ভাড়া দিয়েছেন। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও বাস্তবে মামলা করা ছাড়া আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
তাছাড়া ভারত থেকে কয়লা-পাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ট্রাকগুলো নিয়ম বহির্র্ভূতভাবে জাফলংয়ে মামার দোকান সড়কের দিকে নিয়ে খালাস (আনলোড) করা হয়। ফলে ক্রমশ ধ্বংস হচ্ছে বন।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, ৫শ’ ৩৬ দশমিক ৯৭ একর তথা ২১৭ দশমিক ৪০ হেক্টর ভূমি রয়েছে। ১/১১ অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বনবিভাগের এসব জায়গা অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়। ২০০৮ সালে এসব জায়গায় সবুজ বনায়ন করে বনবিভাগ। ২০১০ সালে বনায়ন সম্পন্ন হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘গ্রিন পার্ক’।
স্থানীয় বিট কর্মকর্তার যোগসাজশে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বন উজাড় করে জায়গা দখল করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের জাফলং বিট কর্মকর্তা আব্দুল খালিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জায়গা দখলের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জায়গা দখলমুক্ত করতে জোর চেষ্টা চলছে। এজন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশসহ একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে।
তিনি বলেন, দখলদারদের গায়ের জোরে সরানো যাচ্ছেনা। তাই এযাবত ৫৬টি মামলা দায়ের করেছে বন বিভাগ। তারাও বলছে, বিকল্প ব্যবস্থা করে দিলে ওখান থেকে সরে যাবে। এখন পর্যন্ত সবুজ বনায়ন প্রকল্পের প্রায় ১৪ একর দখলে নিয়ে কয়লা পাথর রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফ আহমদ রাসেল বাংলানিউজকে জানান, বনবিভাগের ভূমি উদ্ধারে গত ছয়মাস ধরে কোনো সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই আমরা উদ্যোগ নিতাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৫
এনইউ/জেডএস