তিনি বলেন, ফরেস্টের যে বড় বড় গাছ হয় সেগুলোর পেছনে পাখির অবদান। গাছগুলোর বীজ বাতাসে নিতে পারে না, কিংবা পোকমাকড়ও নিতে পারে না।
‘অনেক কিছুর মাধ্যমে বন সৃষ্টি হলেও পাখির ভূমিকা কিন্তু এক নম্বরে। পাখিরা বন তৈরি করে, বনকে সম্প্রসারণ করে এবং বনের ক্ষতিপূরণ করে। যেহেতু বহুদিন ধরে করে তাই আমরা দেখতে পাই না। ’
আরেকটা হলো, যেটুকু বন অবশিষ্ট আছে সেটাকেও পাখি রক্ষা করে। বনের গাছের পাতায় প্রচুর পোকা হয়। লক্ষ, কোটি প্রজাপতি, মথ এবং অন্যান্য পোকা ডিম পাড়ে। বনের গাছের পাতা খেয়েই তারা বড় হয়। বড় হয়ে আবার মথ, প্রজাপতি এবং অন্যান্য পোকামাকড় হয়। এই পোকাগুলোকে দমন করে রাখে পাখি।
পোকাখাওয়া পাখি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রায় ৭০-৭৫ ভাগ পাখিই হলো পোকাখাওয়া পাখি। লক্ষ, কোটি পোকা খেয়ে যাচ্ছে বলেই পাতাগুলো বেঁচে যাচ্ছে। পাতাই হলো গাছের জীবন। পাতা থেকেই গাছ তার খাবার তৈরি করে। সুতরাং বন টিকিয়েও রাখে পাখি। একমাত্র পাখি। পৃথিবীতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ইতালিতে একটা মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের চারদিকে বড় গহীন বন হয়েছিল। প্রাচীনকালের পেন্টিং থেকে তা বোঝা যায়। ওই বনের নাম হয়েছিল ‘পাখিহীন বন’। পাখিহীন বন এজন্য যে ওই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে যে গ্যাস বেরুতো তা পাখি সহ্য করতে পারতো না বোধ হয়। তাই পাখিরা সবাই ওই বন ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ফলে ১০০ থেকে ১২০ বছরের মধ্যে ওই বনটা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। এর একমাত্র কারণই হলো সেই বনে কোনো পাখি ছিল না বলে। সেই ১০০ বা ১২০ বছর আগের তোলা ছবিও আছে ওই বনের। ‘পাখিহীন বন’ এর ছবি এবং পরবর্তীতে ‘গাছহীন বন’ এর ছবি পাশাপাশি দু’টো ছবিই রয়েছে ইতালির সেই মিউজিয়ামে।
ইনাম আল হক বলেন, যদি পাখি না থাকে তবে ১০০ বছর কোনো বনই বেঁচে থাকবে না। পোকারা গাছের সব পাতা খেয়ে ফেলবে; তখন গাছগুলো মরে গিয়ে বন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নিচে ঘাস থাকবে। ঘাস কিন্তু পোকা ধ্বংস করতে পারে না। আর যদি কখনো ঘাসগুলোও মরে যায় তখন সেই বন মরুভূমি হবে। যেটা আমরা দেখতে পাই না - তা হলো গাছপালা রক্ষা করে বনভূমিকে টিকিয়ে রেখেছে একমাত্র পাখি।
আমাদের দেশে যতটুকু বন অবশিষ্ট রয়েছে তা সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষসহ পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলার মাধ্যমেই তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে জানান প্রখ্যাত পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ২১ মার্চ ২০১৭
বিবিবি/ জেডএস