রাজশাহী: সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় ঠা ঠা রোদে পুড়ছে পদ্মাপাড়ের রাজশাহী। অগ্নিদহনে যেন বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সবুজ প্রকৃতি! রুক্ষ আবহাওয়ায় গাছের পাতাও যেন নড়ছে না।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এটি মাঝারি তাপপ্রবাহ। ফলে বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে রাজশাহীতে। কয়েক দিনের টানা দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণীকূল। সারাদিন আগুন ঝরা রোদ আর প্রচণ্ড গরমে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই যেন গরম আর গরম। একটু স্বস্তি মিলছে না কোথাও। দিনের বেলায় দূরে থাক রাতেও গাছের পাতাও নড়ছে। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্রই তেঁতে উঠেছে। ঘরের ট্যাপ দিয়ে আজ বের হচ্ছে ফুটন্ত পানি। বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকায় মাথার ওপরে ফ্যানটাও দিচ্ছে গরম বাতাস। কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর আবহাওয়ার আর তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করছে রাজশাহীতে। এই অবস্থায় প্রশান্তির বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে এ রুক্ষ বরেন্দ্রঞ্চালে।
এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে করোনার মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। বিশেষ করে হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে যেন ধাপ ফেলার যায়গা নেই। বেডে ফ্লোরে সবখানেই গরমজনিত কারণে রোগী আর রোগী। একদিকে করোনা অন্যদিকে গরমজনিত রোগীর চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, তাপমাত্রা কেবলই বাড়ছে। এতে করোনার মধ্যে ঘরে ঘরে আবার ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক, হিস্টিরিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে এ তীব্র গরমে। তাই এ সময় বয়বৃদ্ধ ও শিশুদের রোদে না বের হয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশের মধ্যে থাকার জন্য বলেন। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, ডাব ও দেশি ফলমূল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক ও হাসপাতাল উপ-পরিচালক।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীর তাপমাত্রা বাড়ছেই। রোববার দুপুরে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগের দিন শনিবার (১০ এপ্রিল) ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তার আগের দিন শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪২ হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়। এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়।
ফলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজকে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর গত ২ এপ্রিল রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠেছিল। যা এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে উল্লেখ করেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ওই কর্মকর্তা। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে মৃদু দাবদাহ বিরাজ করছিল। পরে এটি মাঝারিতে রূপ নিয়েছে। রোববার ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠায় তাপমাত্রা মাঝারি তাপদাহে রূপ নিলো। এ কারণে গরমের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর রাজশাহীতে তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ওই রেকর্ড ভাঙেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
এসএস/এএটি