১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটিতে দুই বছর আগেও ওষুধ বলতে ছিলো প্যারাসিটামল, চিকিৎসাসেবা পাওয়া সেখানে ছিলো দূর কল্পনা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এখন প্রসূতি মায়েদের বিনামূল্যে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কেবল চিকিৎসাই নয়, প্রসূতি মায়েদের বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থাও করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফোন করে রোগীর খোঁজ-খবর নেওয়া থেকে শুরু করে প্রসূতি মায়ের সেবায় ছুটে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স। নদীপথে রয়েছে নৌ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। প্রসূতি মায়েদের জরুরি চিকিৎসায় বিনা ভাড়ায় পরিচালিত হয় নৌ অ্যাম্বুলেন্স। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মেঘনার সাহস’।
হাসপাতালটির মহিলা ওয়ার্ডে ৯ নম্বর বেডের রোগী মনি রাণী দাশ এসেছেন মনপুরার কলাতলী গ্রাম থেকে। নবজাতক শিশুসহ তার উন্নত সেবা চলছে। মনি রাণী দাশের বড় বোন মিলি রাণী দাশ বলেন, এখানে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে। ডাক্তারেরা সব সময় দেখে যান। ডেলিভারির আগেও নিয়মিত চেকআপ করতেন। ফোন করে খোঁজ-খবরও নিতেন।
এতসব আয়োজন সম্ভব হয়েছে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মাহমুদুর রশিদের কল্যাণে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি ডা. মাহমুদুর রশিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এক সময় উৎকট গন্ধে মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে হাঁটাচলা করা যেত না। এখন সেই হাসপাতালে দৈনিক ১৫০ জন রোগী আনন্দে সেবা নিচ্ছেন। হাসপাতালের প্রবেশদ্বার নানান রঙের ফুল গাছে সাজানো হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রয়েছে তার ভিতর-বাহির। সবখানে রাখা হয়েছে ডাস্টবিন।
মনপুরাবাসীর গর্বের এক সম্পদে পরিণত হওয়া হাসপাতালটি মাত্র দুই বছরে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে রোগীর সংখ্যাও। জরুরি ভিত্তিতে হৃদরোগ সেবা ও রোগী শরীরে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি এখনও চালু হয়নি অর্থ বরাদ্দ না থাকায়।
ডা. মাহমুদুর রশিদের উদ্যোগের সঙ্গী হয়েছেন স্থানীয় অনেকে। উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আক্তারসহ সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। মনপুরার তরুণেরাও হাসপাতালটিকে গড়ে তুলতে নানাভাবে নিজেদের ভূমিকা রেখে চলেছেন। তরুণদের গড়ে তোলা ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশন নামের সংগঠনের পক্ষ থেকেও ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।
মনপুরা কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমরা এই হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। আমাদের সবার উচিত হাসপাতালের কল্যাণে এগিয়ে আসা। তাহলে এটা মডেল হাসপাতাল হয়ে উঠবে। শুধু সরকারের হাতের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না সবাই এগিয়ে আসতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় আইসিডিডিআরবি’র শেয়ার প্রকল্প স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কার্যকর তথ্য-উপাত্তভিত্তিক স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের নিয়ে স্বাস্থ্য গবেষণা, স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করা ও জেলা স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা সুসংহত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তাদের কর্মসূচির প্রভাবে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ হাসপাতালের কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন। একে একে কেনা হচ্ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম। ফলে একদিন যে হাসপাতালে প্যারাসিটামল কেনার টাকা ছিলো না সেখানে এখন পাওয়া যাচ্ছে মানসম্মত চিকিৎসা।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
এমআইএস/এমজেএফ