ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে আতঙ্কে বাগেরহাটবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৮
পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে আতঙ্কে বাগেরহাটবাসী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র-ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: দেশের অন্যতম উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট। বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ জেলার মানুষ। বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান ও সম্পদ হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে এখানকার মানুষ।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের হাত থেকেও রক্ষা পায়নি তারা। ওইদিন দেশের বিভিন্ন জেলার ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারাণ।

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন ১ কোটি মানুষ।

৯১ পরবর্তী বিভিন্ন সময়েও ঝড়, ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগেরহাটের মানুষ। আপনজনকে হারিয়ে হয়েছে সর্বশান্ত। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের একমাত্র জায়গা হলো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার)। তবে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হলেও পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই এ জেলায়। ফলে আতঙ্কে দিন কাটে এলাকার মানুষের। তাই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের দাবি উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মানুষের।

এলাকাবাসীর ধারণা, অতীতে ঘটে যাওয়া দুর্যোগের সময় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় এ জেলায় এতো বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে উপকূলবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় স্কুল কাম আশ্রয়কেন্দ্র হলেও এতে ধারণক্ষমতা অনেক কম। নেই বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ থেকে ৭শ’ লোকের ধারণক্ষমতা থাকলেও সেখানে আশ্রয় নিতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষের। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। অনেকে শেল্টারে জায়গায় পান না।

এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ অনেক এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই। কিছু কিছু আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। রাস্তা নেই কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য।

মোড়েলগঞ্জের ঘষিয়াখালী গ্রামের আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার কম। যা আছে তাতে সঙ্কুলান হয় না। পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় আমরা ঝুঁকির মধ্যে থাকি। কারণ ঝড়ের খবর সোনার পর সবাই চেষ্টা করে শেল্টারে যাওয়ার। সবার জন্য যায়গা না থাকায় কেউ কেউ শেল্টারে উঠতে না পেরে ঝুঁকির মধ্যে নিজের বাড়িতে থাকে।

দুর্যোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস’র প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে কাজ করছি। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ প্রশিক্ষণ পেয়ে সচেতন হয়েছে। দুর্যোগের বিপদ সংকেতের খবর পেলে তারা দ্রুত সাইক্লোন শেল্টারে যান।

তিনি আরও বলেন, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলা এ তিন উপজেলায় ২৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০টি করে শেল্টার প্রয়োজন হলেও রয়েছে গড়ে ৫টিরও কম।

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের বলেন, ঘ‍ূর্ণিঝড় সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায়। এখনও পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার গড়ে না ওঠায় এসব এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকে। দ্রুত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
 
খাউলিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিলন মীর বলেন, প্রয়োজনের তূলনায় সাইক্লোন শেল্টার এখনও অনেক কম। নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা দরকার। যেগুলো আছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে টয়লেট নষ্ট হয়ে গেছে। যা সংস্কার জরুরি।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। নতুন করে আরও ২০টি নির্মাণ করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ  সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।