ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ডারবান থেকে ক্রাইস্টচার্চ, ব্যবধানটা ৭৫ বছরের

আনোয়ার হোসেন সোহাগ, নিউজরুম এডিটর, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
ডারবান থেকে ক্রাইস্টচার্চ, ব্যবধানটা ৭৫ বছরের

একবার নিল ওয়াগানারের কথা চিন্তা করুন!

হ্যামস্ট্রিং ও মেরুদণ্ডের ইনজুরির কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের মাঝপথেই একপ্রকার ছিটকে যান তিনি। ডাক্তারের বিধিনিষেধ না থাকলে হয়তো ইনজুরি নিয়েও বোলিং চালিয়ে যেতেন।

যার প্রমাণ বাঁহাতি এই পেসার আগেই দেখিয়েছেন। ভেবেছিলেন হয়তো ব্যাট করতে হবে না। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে নামতে বাধ্য করিয়েছে।  

শেষ বলে জয়ের জন্য তখন দরকার ১ রান। আসিথা ফার্নান্দোর বলে হুক করতে চেয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু বল ব্যাটে লাগেনি। উইলিয়ামসন শট খেলার আগেই কোনোকিছু না ভেবে ওয়াগনার দৌড় শুরু করে দিয়েছেন।  

একইসঙ্গে দুটো ইনজুরি নিয়ে দৌড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়। ওয়াগনার তবুও দৌড়েছেন, বেশ বড়সর এক ডাইভ দিয়ে অতিক্রম করেছেন ২০ মিটার দূরত্ব। সেই দৌড়ে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেলেও কোনো আক্ষেপ হতো না তার। কেননা কোনো ইনজুরিই সেই মুহূর্তে জয়ের তৃপ্তিকে দমিয়ে রাখতে পারতো না। নিজের ৩৭ তম জন্মদিনটাকে একপ্রকার অমরই করে দিলেন তিনি।

একবার নিরোশান ডিকভেলার কথা চিন্তা করুন

উইলিয়ামসন তখন ৩৩ রানে ব্যাট করছেন। নিউজিল্যান্ডের পায়ের তলায় মাটি তখনও শক্ত হয়নি। ঠিক সেই সময় শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়ে বসেন উইলিয়ামসন। কিন্তু তা গ্রহণ করতে ব্যর্থ ছিলেন ডিকভেলা। লাহিরু কুমারার শর্ট লেংথের ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন উইলিয়ামসন। কিন্তু ডানপাশে ডাইভ দিয়েও তা ধরতে পারেননি ডিকভেলা। দিনশেষে উইলিয়ামসনের বীরত্ব দেখে নিজেকে হয়তো গালমন্দ করতে ইচ্ছে করছে এই উইকেটরক্ষকের। কিংবা আসিথা ফার্নান্দোর জন্য আক্ষেপ হচ্ছে। শেষ বিকেলে দ্রুত তিনটি উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের দারুণভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন এই পেসার।

একবার... না থাক?  উইলিয়ামসনের কথা চিন্তা করে লাভ নেই। তিনি এরকমই! জায়ান্ট স্ক্রিনে যখন ‘নট আউট’ শব্দটি ভেসে উঠল, তখনও তার চোখমুখ দেখলে কেবলই একটি সাধারণ জয়ের প্রতিচ্ছবি মনে করবেন। এতো রোমাঞ্চ, এতো উত্তাপ, এতো নাটকীয়তা এর কোনোকিছুই কাবু করেনি তাকে। জয়ের পর করমর্দন শেষে আলিঙ্গন করেন ওয়াগনারের সঙ্গে। ব্যস এতোটুকুতেই শেষ তার উদযাপন। অন্য কোনো ক্রিকেটার হলে ওই সময় কী করতেন তা নিশ্চয়ই আপনি আন্দাজ করতে পারছেন?   

৩৩ রানে জীবন পাওয়ার পর একটি ভুল শটও খেলেননি। কালজয়ী এক ইনিংস খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৮ তম সেঞ্চুরি। ম্যাচ সেরা ড্যারিল মিচেলের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে গড়েন ১৪২ রানের জুটি। নিজের ব্যাট থেকে করেন ১১ চার ও ১ ছক্কা ১২১ রান। কিন্তু এই ১২১ রানের চেয়ে শেষ বলে বাই থেকে দৌড়ে ১ রান নেওয়াটাই সবচেয়ে বেশি মূল্যবান হয়ে থাকবে উইলিয়ামসনের কাছে। সজোরে ব্যাট চালিয়ে বলের সঙ্গে সংযোগ করাতে না পারলেও দৌড়াতে ভুল করেননি।

উইকেটের পেছনে বল ধরে তা স্ট্রাইক প্রান্তে মেরেছিলেন ডিকভেলা। কিন্তু তা স্টাম্পের ধারেকাছেও ছিল না। তবে ফিরতি বলে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থ্রো করেন বোলার আসিথা ফার্নান্দো। এবার অবশ্য স্টাম্প ভাঙল। কিন্তু তার আগেই দাগের ওপারে চলে গিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। সম্ভাব্য শেষ বলে টেস্ট জয়ের দ্বিতীয় ঘটনা এটি।

প্রথমটি ছিল ১৯৪৮ সালে ডারবানে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে। সিনেমায় রিমেক ইচ্ছে করলেই বানানো। ক্রিকেটের জন্য রিমেক শব্দটা পুরোপুরি কাকতাল সম্পর্কের ওপর নির্ভর। ৭৫ বছর পর প্রায় একই গল্পের রিমেক হলে বেশ আশ্চর্যই লাগে। শেষ বলে শেষ হওয়া সেই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মতোই দুই উইকেটের জয় পায় ইংল্যান্ড।
শেষ ওভারে তাদেরও দরকার ছিল ৮ রান, শেষ বলেও প্রয়োজন ছিল ১ রান। তখন অবশ্য ওভার হতো আট বলে। শেষ বলে উইলিয়ামসনের মতোই বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি গ্লাডউইন। কিন্তু ঠিকই এক রান তুলে জয়ের উল্লাসে মাতেন তিনি। মাঠেই তা উদযাপন করেন শতশত মানুষের সঙ্গে। ডারবানের কিংসমিড থেকে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল; ব্যবধানটা ৭৫ বছরের!
 

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩

এএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।