গুরুতর অসুস্থ তামিম ইকবালকে দেখতে সাভারের কেপিজে হাসপাতালে গেছেন সাকিব আল হাসানের বাবা মাশরুর রেজা এবং মা শিরীন আক্রার। হাসপাতাল সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
গতকাল মাঠে নামার আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তামিমের। এরপর কেপিজে হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করার পর হার্টে ব্লক ধরা পড়ে তার। পরে একই হাসপাতালে রিং পরানো হয়। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের জন্য প্রার্থনা করেছে ক্রিকেটমহল থেকে পুরো দেশ। রাতে ভিডিওবার্তা ও পরে ফেসবুকে তামিমের জন্য দোয়া চান আরেক সাবেক অধিনায়ক ও একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সাকিব ও তামিম একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। একসঙ্গে বাংলাদেশকে অসংখ্য ম্যাচ জিতিয়েছেন তারা। মাঝে সম্পর্কের অবনতি হলেও তামিমের কঠিন সময়ে চুপ থাকতে পারেননি সাকিব। নিজের ৩৮তম জন্মদিনে তামিমের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর শুনে তিনি ফেসবুকে লেখেন, 'আজ আমার জন্য বিশেষ দিন, কিন্তু মনটা পুরোপুরি আনন্দে নেই, কারণ আমার প্রিয় সতীর্থ ও বন্ধু তামিম ইকবাল অসুস্থ। মাঠে আমরা একসঙ্গে অনেক লড়াই করেছি, অনেক স্মৃতি রয়েছে, আর সবসময় চাইব আমাদের এই পথচলা আরও দীর্ঘ হোক। '
সাকিব আরও লিখেছেন, 'তামিম, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম বড় শক্তি। তোমার দ্রুত সুস্থতা ও মাঠে ফিরে আসার জন্য দোয়া করছি। ইনশাআল্লাহ, তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। তামিমের জন্য আপনার দোয়াই হবে, আমার জন্মদিনের সেরা উপহার। দোয়া করবেন—আমার ভাই তামিম যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরতে পারে। '
এর আগে গতকাল সকালের দিকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে আজ মাঠে নেমেছিলেন তামিম। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে খেলা শুরুর আগে নির্ধারিত সময়ে টসও করেছেন অধিনায়ক তামিম। কিন্তু পরে আর ফিল্ডিংয়ে নামতে পারেননি তিনি।
খেলা শুরুর আগে বুকে ব্যথা অনুভব করায় বিকেএসপির কাছেই বেগম ফজিলাতুন্নেসা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এনজিওগ্রাম করে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তামিম। তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। হাসপাতাল থেকে তামিমকে ঢাকায় আনার চেষ্টা করা হয় হেলিকপ্টার যোগে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তা করা যায়নি।
হার্ট অ্যাটাকের পর তামিমের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছিল। হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। যে কারণে তাকে ২২ মিনিট ধরে সিপিআর এবং ৩ বার ডিসি শক দিতে হয়েছে। তামিম যে পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তার ফেরার সম্ভাবনা ছিল একেবারেই ক্ষীণ। খুব কম রোগীই সেখান থেকে ফিরে আসতে পারেন। পরে ওই হাসপাতালেই তার হার্টে রিং পরানো হয়।
হার্টে রিং পরানোর পর তামিমের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। জ্ঞানও ফেরে দ্রুতই। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তামিম কথা বলতে পারছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। বিকেলে তাকে দেখতে গিয়ে কথা বলেন তার মোহামেডান ও জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের সতীর্থ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, আজ সকালে তামিমকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খাবার খেয়েছেন তিনি। আজ সকালে কিছুটা হাঁটার চেষ্টাও করেছেন। কিছু সময়ের জন্য কেবিলে গিয়ে তাকে দেখে এসেছেন তার স্বজনরা।
তামিমের চিকিৎসার খোঁজ নিতে দুপুর ১২টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি অধ্যাপক ডা. মোঃ আবু জাফর যান সাভারের কেপিজে হাসপাতালে। তিনি জানান, তামিম এখন শঙ্কামুক্ত। তিনি আরও জানিয়েছেন, তিন মাস পরেই হয়তো খেলায় ফিরতে পারবেন তামিম।
তামিমের ডিপিএল ক্লাব মোহামেডানের ম্যানেজার সাজ্জাদ আহমেদ শিপন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তামিমের অবস্থা ঠিক থাকলে সন্ধ্যা বা রাতের দিকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। তবে এই মুহূর্তে তাকে অন্য কোথাও 'মুভ করা খুবই রিস্কি' বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৫
এমএইচএম