ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

নারী ক্রিকেটারের পথচলা

সুমনার অনুপ্রেরণার নাম সালমা

স্পোর্টস টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
সুমনার অনুপ্রেরণার নাম সালমা ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিকেএসপি থেকে ফিরে: বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক হয়ে সালমা খাতুন যখন দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাচ্ছেন জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা তখন ক্লাস থ্রি’র ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছিল ঝোঁক।

বাবা সরকারী চাকুরে হওয়ায় কোয়ার্টারে থাকতেন সুমনারা। সেই সুবাদে বাসার সামনেই পেতেন খেলার মাঠ। দাড়িয়াবান্ধা কিংবা বৌঁছি নয়; তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ক্রিকেট।

একদিন সুমনার বাবা ও তার বন্ধুদের দলের বিপক্ষে এলাকার জুনিয়র ক্রিকেটারদের প্রীতিম্যাচ। বাবা মোস্তফা কামালের দলে খেলোয়াড় কম থাকায় মাঠে নেমে গেলেন ছোট্ট সুমনা। কয়েকটি ক্যাচ নিয়ে বড়দের প্রশংসাও কুড়ালেন, ‘একদিন সালমা হবে সুমনা’। বড়দের সেই মন্তব্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে এখন সুমনা। পাকিস্তান সফরের জন্য বাংলাদেশ নারী দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন বিকেএসপির এই ক্রিকেটার। মূল দলে জায়গা না হলেও সালমা খাতুনদের সঙ্গে এক মাসের ক্যাম্পে থেকে শিখে নিয়েছেন অনেক কিছু। এবার তার লক্ষ্য ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই পাওয়া, ‘এ বছরের নভেম্বরে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং আছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষাও আছে, এটাও মাথায় রাখা উচিত আমার। চেষ্টা করবো কোয়ালিফাইং টিমে থাকার, যদি নাও থাকি চেষ্টা থাকবে যাতে ২০১৬ বিশ্বকাপের দলে থাকতে পারি, ম্যাচ খেলতে পারি। এটাই আমার লক্ষ্য। ’

সুমনার ক্রিকেটে হাতেখড়ি ২০১০ সালে। রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোচ মো: ইকবালের কাছে। সেই থেকেই ধ্যানে-জ্ঞানে ক্রিকেট। জেলা স্টেডিয়ামে ট্রায়ালের দিনের মজার এক ঘটনা নিজ থেকেই জানালেন সুমনা, ‘যখন জেলায় ট্রায়াল দিতে যাই, আমি ছিলাম সবার চেয়ে ছোট। ট্রায়াল দেওয়ার সময় কোচ জিজ্ঞেস করছিলেন, কে ব্যাটার, কে কিপার, কে পেস বোলার, কে অলরাউন্ডার, কে স্পিনার। মজার ব্যাপার হলো, তিনি যেটিই বলেন সেটাতেই থাকি আমি। ’

ক্রিকেটের সব ডিপার্টমেন্টে সুমনার প্রতিভা থাকলেও ২০১২ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর ব্যাটিং আর অফস্পিনকেই বেছে নেন, ‘কিপিং নিয়ে কাজ করতাম, তারপর পেস বল। যখন আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হই তখন অফস্পিনটা খুব ভালো করছিলাম। কোচরা এটাকেই বেছে নিতে বলেছেন। এখন আমি অফস্পিনার এবং ব্যাটার। ’

বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়াটা সুমনার ইচ্ছাতেই। বাবা-মা চাইতেন পড়ালেখাতে পুরো মনযোগ দিক তাদের মেয়ে। তবে সুমনা খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে বাধা দেননি অভিভাবক, ‘টেলিভিশনে বিকেএসপি সংক্রান্ত অনুষ্ঠান হলে মনযোগ সহকারে দেখতাম। বিকেএসপিতে ভর্তির প্রক্রিয়া জানার চেষ্টা করতাম। প্রথমে আমার পরিবার চাইতো শুধু পড়ালেখার সাথে যেন সংযুক্ত থাকি। তবে, আমি ইচ্ছা পোষণ করি খেলোয়াড় হবো। আমাকে বাসা থেকে পুরোপুরি সমর্থন দেওয়া হয়। বাবা-মায়ের উৎসাহেই ক্রিকেটের এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ’

লক্ষ্য আর চেষ্টা ঠিক থাকলে স্বপ্নপূরণ হয়-এমন বিশ্বাস সুমনার। সালমা খাতুন, জাহানারা আলম, শুকতারা রহমানদের সঙ্গে এক মাস জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকাকে স্বপ্ন পূরণের ধাপ হিসেবে দেখছেন সম্ভাবনাময়ী এই ক্রিকেটার, ‘এটা ছিল জাতীয় দলে আমার প্রথম ক্যাম্প। অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম এটা ভেবে যে, কী রকম হবে ক্যাম্পটা। শুরু করার পর খুব ভালো লেগেছে। অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিলাম। সালমা, জাহানারা, শুকতারা, মিতু আপুদের সঙ্গে আলোচনা করতাম। তারা অনেক পরামর্শ দিতেন, ওগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করতাম। জাতীয় দলে কোচিংটা কি রকম পর্যায়ের হয় বুঝতে পেরেছি। এখন আমি কী করলে ওই লেভেলটায় যেতে পারবো কিংবা ধরে রাখতে পারবো, সেই ধারণা পেয়েছি। সিনিয়ররা সবাই সাপোর্ট করেছেন। কোচরাও আমাকে সহায়তা করেন। ’   

১৬ বছর বয়সেই জাতীয় দলের আঙিনা মারিয়ে এসেছেন রংপুরের মেয়ে সুমনা। পাকিস্তান সফরের জন্য মূল দলে  জায়গা হয়নি। তাতে আফসোস নেই সুমনার। ক্যাম্পে থেকে নিজের ঘাটতি গুলো খুঁজে পেয়েছেন তিনি, ‘প্র্যাকটিস ম্যাচগুলোয় একটু খারাপ করেছিলাম। অনুশীলনে যেটা করেছিলাম সেটা যদি ম্যাচে বাস্তবায়ন করতে পারতাম তাহলে হয়তো ভালো কিছুই হতো। এখন আমার টার্গেট, বিকেএসপির প্র্যাকটিসে যেটা করছি সেটা যাতে ম্যাচে বাস্তবায়ন করতে পারি। ’

কোনো ক্রিকেটারের খেলা আলাদা করে ভালো লাগে কী না, জানতে চাইলে সুমনার ঝটপট উত্তর, ‘ইংল্যান্ডের সারা টেলরের ব্যাটিং অনেক পছন্দ, বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার নিসা। আর বাংলাদেশ টিমের মধ্যে বোলিংয়ে লতা মন্ডল আর পিংকি (ফারজানা হক) আপুর ব্যাটিং ভালো লাগে। এছাড়া সাকিব ভাইয়ার খেলা খুব পছন্দ করি। ’

সালমা খাতুনদের দেখানো পথে ক্রিকেটে উঠে আসছে সুমনার মতো সম্ভাবনাময়ী নারী ক্রিকেটাররা। ভবিষ্যতে সালমা হবেন-এমন স্বপ্ন নিয়েই বিকেএসপিতে যোগ দিচ্ছেন অনেক ক্রিকেটার। আন্তজার্তিক পর্যায়ে নারী ক্রিকেটের শুরুর কাজটা তো করে দিয়েছেন সালমারাই। সেই সালমা খাতুন প্রসঙ্গে সুমনা জানালেন, এই সালমা আপুই আমার উৎসাহের জায়গা। ওনাকে দেখেই আমি উৎসাহিত হই। ’

সবশেষে সুমনা যোগ করেন, ‘ক্রিকেটে অনেক মেয়েরাই ভালো করছে। কিন্তু প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ ও পড়ালেখা একসাথে অন্য কোথাও তো হচ্ছে না। দুইটা একসাথে করতে পারছি এখানে। আমি গর্বিত যে, বিকেএসপির মতো প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর ২০১৫
এসকে/এমআর

** হকিতে হতাশ নন সিফাত
** মায়ের অনুপ্রেরণায় বিকেএসপিতে সাইফ
** বিকেএসপি’তে আরও জনবল প্রয়োজন
** দেশসেরা খেলোয়াড়রা বিকেএসপি’র আবিষ্কার
** গতিশীল হচ্ছে বিকেএসপি’র আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
** এগিয়ে যাচ্ছে বিকেএসপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।