ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও ‘বিদায় ক্যাপ্টেন’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৭
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও ‘বিদায় ক্যাপ্টেন’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

টি-টোয়েন্টি থেকে আচমকা অবসরের ঘোষণা দিয়ে শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই নন, প্রতিবেশি দেশ ভারতকেও নাড়িয়ে দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ভারতের জনপ্রিয় একটি দৈনিকেও (আনন্দবাজার পত্রিকা) উঠে এসেছে মাশরাফির ‘অবসর কাহিনী’। তাদের নিজস্ব সংবাদদাতা মাশরাফিকে নিয়ে লিখেছেন বিশেষ স্টোরি।

ভিন্ন ধাতুতে গড়া মাশরাফির নেতৃত্বগুণ, দেশের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে লিখেছে আনন্দবাজার। ক্রিকেটের ইতিহাসে ম্যাশের মতো আর কোনো ক্রিকেটার নিজের ইনজুরিকে তোয়াক্কা না করে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানায় তারা।

তাদের লেখাটি তুলে ধরা হলো:

.দুই পায়ে মোট আটবার অস্ত্রোপচার। পা বাঁচাতে যখন মাশরাফিকে না খেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘পায়ে গুলি খেয়ে যদি মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে পারে, তাহলে আমি কেন সামান্য সার্জারি নিয়ে মাঠে খেলতে পারবো না?’ দৃঢ়চেতা মনোভাব, ব্যক্তিত্ব আর সহজাত ক্রিকেটীয় মেধার সঙ্গে দারুণ নেতৃত্বগুণ অন্য আরো ১০ জন ক্রিকেটার থেকে আলাদা করে চিনিয়েছে বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। তিনিই দেখিয়েছেন কেবল তীব্র ইচ্ছাশক্তি আর দেশের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা থাকলে- অনেক কিছুই সম্ভব। ম্যাচ জিতিয়ে গোটা দেশ যখন আনন্দে মাতে, মাশরাফি তখন হাঁটুর ব্যথায় কাতরান ড্রেসিংরুমে। ক্রিকেটে তার মতো ইনজুরি জয় করা খেলোয়াড় আর একজন আছেন বলে ইতিহাস সাক্ষী দেয় না। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি তাই ধ্রুবতারা!

..প্রিয় ম্যাশ দেশের মানুষের হৃদয়ে কতটা জায়গা করে নিয়েছেন, তা বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা গণমাধ্যমে চোখ রাখলে সহজেই বোঝা যায়। বিদায়েও তাই খেলোয়াড় মাশরাফির বাইরে তাই মানুষ মাশরাফিকে নিয়েই জয়গান। টি-টোয়েন্টিতে অবসরের ঘোষণাতেই ব্যথিত বাংলার কোটি জনতা। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবার প্রিয় ম্যাশ বা পাগলার আবির্ভাব অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে প্রয়োজন ছিল একজন বোলারের, ঠিক সেই সময়ে প্রতিভা আর পরিশ্রমের মিশ্রণে একটু ভিন্ন ধাতুতে গড়া এই তরুণের খোঁজ পেল দেশটির ক্রিকেট। আক্রমণাত্মক, গতিময় বোলিং দিয়ে প্রথমে নজর কেড়েছিলেন সবার। কালে পরিণত হয়ে তিনি এখন বাংলাদেশের সফলতম পেস বোলারদের একজন। সফলতম অধিনায়ক তো বটেই।  

...একটু একটু করে বেড়ে ওঠা আজকের মাশরাফির। ধারাবাহিকভাবে জয় করেছে হাজারও ক্রিকেটপ্রেমীর মন। শুধু খেলা দিয়ে নয়, বিনয় আর লড়াকু মনোভাবের সঙ্গে সহজাত নেতৃত্বের গুণ তাকে আর দশটা ক্রিকেটার থেকে আলাদা করে রেখেছে। ইনজুরিতে পড়ে পায়ে অপারেশনের এখন আর কোনো জায়গা বাকি নেই! তবুও তিনি বারবার মাঠে ফিরেছেন ক্রিকেটকে ভালোবেসে। জীবন বাজি রেখে, দেশকে ভালোবেসে খেলে গেছেন দেশের জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। ক্রিকেটে যতটা লড়াকু, ব্যক্তি হিসেবে ততটাই বিনয়ী মাশরাফি। আর এই বিনয়ে বশ বাংলার কোটি মানুষ। সহজাত বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা তো আছেই; সঙ্গে ভালোবাসা ও উদারতার এক উদাহরণও তিনি। এই তো কদিন আগে নিরপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে মাঠে ঢুকে পড়া এক ভক্তকে যেভাবে বুকে টেনে নিলেন, তা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে হাজারও ক্রিকেটপ্রেমীর। পরে তো আবার নিরাপত্তাকর্মীদের হাত থেকে তাকে রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন নিজেই।

....আবার বাংলার আবেগী ক্রিকেট দর্শক যখন ক্রিকেটারদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ উপাধি দিতে ফেসবুকে ইভেন্ট খোলেন তখন সেখানে গিয়েও প্রতিবাদ জানিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘ক্রিকেটারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা টানলেই খুব খারাপ লাগে। আগেও অসংখ্যবার বলেছি, আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুর আগে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান সব কিছুর ওপরে। সামান্য ক্রিকেট খেলা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়। ’

দলের কাছে কোনোদিন তিনি নামকাওয়াস্তে অধিনায়ক ছিলেন না। ছিলেন সবার প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’। দলটাকে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি নিজের ঘরের মতো! নেই কোনো ভেদাভেদ, নেই কোনো কোন্দল। কারো বিয়ে, কিংবা কারো কোনো কাজে এগিয়ে যেতেন বড় ভাইয়ের মতোই।

.....এতো ইনজুরির ঝাপটা পেরিয়ে মাশরাফিকে তো যেতেই হতো একদিন। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি এই বিদায় মানতে পারছেন না অনেক অনুরাগীই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে ৬ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দিনটা তাই কালো অক্ষরে লেখা থাকবে প্রিয় ক্যাপ্টেনের টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের দিন হিসেবেই।

গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামার আগে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণকে চিরতরে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান টাইগার দলপতি মাশরাফি। যদিও তিনি ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করবেন। কিন্তু মাশরাফির টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জাননো নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নেমে এসেছে হতাশা। ভারী হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর পাতা। বাদ যায়নি দেশের গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলোও। যেন অভিভাবক হারিয়েছে এদেশের ক্রিকেট।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ০৭ এপ্রিল ২০১৭
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।