প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে কালে ভাদ্রে দু-একটি জয় দেখা দিলেও সিরিজ জয় ছিল সোনার হরিণ।
বাজে, ভুলে ভরা ও বিলাসী শটস খেলে তখন ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফিরতেন।
সফরকারী যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রায় প্রতিটি সিরিজেই ঘরের মাঠে হারগুলো এমন বিবর্ণ হয়ে ধরা দিত, যার অনেকটাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজে দেখা গেল। হারের ধরণ, ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরণ, বোলারদের ভোঁতা বোলিং, সব কিছুতেই যেন সেই হারানো দিনের ছোঁয়া।
২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০১৪ এর শেষ ও ২০১৫ এর শুরুকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের রেঁনেসা বলে অভিহিত করা হয়। যার শুরুটা হয়েছিল ওই বছরের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে। সিরিজটিতে টি-টোয়েন্টি ছিল না। কিন্তু বাকি দুটি ফরম্যাটে (টেস্ট ও ওয়ানডে) সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করে বছরের শেষটা ভাল করেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ।
শেষটা ভাল করেছিল বলেই ২০১৫ এর শুরুটাও হয়েছিল উড়ন্ত। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে কি পারফরম্যান্সটাই না করলো বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে মাশরাফিরা। বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই ঘরের মাঠে ক্রিকেটের সবসময়ের শক্তিশালী পাকিস্তানকে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ, টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয়ের ধারাবাহিকতায় ভারতেকেও করলো নাস্তানাবুদ। টাইগারদের প্রবল আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকাও।
পরের বছর ঘরের মাঠে আয়োজিত টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলো মাশরাফির দল। একই বছর সিরিজ খেলতে আসা ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্ট হারিয়ে এশিয়ার ক্রিকেটে পরাশক্তি হয়ে ওঠার জানান দিল বাংলাদেশ।
পরের বছর ঘরের বাইরে শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ড্র, আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সফরে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এবং বিশ্ব ক্রিকেটের কুলিনদের আসর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন মাশরাফি, সাকিবরা।
একই বছর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিতে নিজেদের অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায় স্বাগতিক টাইগাররা।
ওই শেষ। এরপর থেকেই যেন উড়ন্ত দলটি হঠাৎ মাটিতে ভুপাতিত। হার নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেল বছরের অক্টোবরে দ. আফ্রিকা সফরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নাকাল হয়ে দেশে ফিরলো। অবশ্য দ.আফিকা সফরে কোনো দলের অভজ্ঞতাই সুখকর হয় না।
তাই ধারণা করা হচ্ছিলো এ বছরের শুরুতে ঘরের মাঠে আয়োজিত ত্রিদেশীয় ও শ্রীলঙ্কা সিরিজে জয় নিয়ে হারের সেই গ্লানি অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ। কিন্তু কিসের কি?
ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের খেলা ৫ ম্যাচের প্রথম তিনটির দুটিতে জিম্বাবুয়ে ও অপরটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারালেও টুর্নামেন্টে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এসে মাত্র ৮২ রানে গুটিয়ে গেল মাশরাফিদের ইনিংস। যা টপকাতে কোনো উইকেটই হারাতে হলো না হাথুরু শিষ্যদের।
ফাইনালে লঙ্কানদের দেয়া ২২২ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪২ রানে তাসের ঘরের মতোই ভেঙ্গে পড়লো স্বাগতিকরা।
ভাগ্যিস শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট ম্যাচটা ড্র করতে পেরেছিল লাল-সবুজের দল। কেননা ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টের দুটি ইনিংস (১১০ ও ১২৩ রান) যেভাবে তারা খেললো তাতে ইতোমধ্যেই তাদের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ১৯৩ রানের বিশাল সংগ্রহের পরেও স্বাগতিক বোলারদের ব্যার্থতায় টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ সংগ্রহও জলে গেল।
সিলেটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও তথৈবচ অবস্থা। বোলারদের নির্বিষ বলের সুযোগ নিয়ে ২১১ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁড়ে দিল সফরকারী শ্রীলঙ্কা। যা টপকাতে গিয়ে ব্যাটসম্যাপনদের বিলাসী ও ভুলে ভরা শটে ১৩৫ রানেই সলিল সমাধি হলো বাংলাদেশ ইনিংসের। হার মানলো ৭৫ রানে। পূর্ণ করলো টি-টোয়েন্টিতে হারের ষোল কলা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস