র্যাঙ্কিংয়েও তার ছাপ পড়েছে। একই ধারায় না হলেও টেস্ট ক্রিকেটেও উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।
২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতিশ্রুতিশীল একটি দল হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ। দলের অভিষেক ম্যাচে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করে দলকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অধিনায়ক নাইমুর রহমানের ১৩২ রানে ৬ উইকেট অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেরা বোলিং। ম্যাচটা ৯ উইকেটে হেরে গেলেও শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের শক্তিমত্তা ভালোভাবেই জানাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
এরপরের টেস্ট ক্রিকেটভ্রমণ বেশ ক্লান্তিকর। অনেক পরাজয় দেখতে হয়েছে টাইগারদের। টেস্ট ক্রিকেট আসলে কতোটা কঠিন পথ সেটা বুঝেছেন যখন তখন থেকেই একের পর এক পরাজয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন টাইগাররা। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেওয়ার দাবিও উঠেছে বহুবার। আর র্যাংকিং? দশ নম্বর স্থানটি একপ্রকার পাকাপোক্তভাবে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।
টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের দলীয় অর্জনের খাতা পূর্ণ না হলেও ব্যক্তিগত সাফল্য রয়েছে অনেক। ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর এসএসসিতে অভিষেক টেস্টে ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচি টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন অলোক কাপালি। তবে এমন সব ব্যক্তিগত সাফল্য সত্ত্বেও টেস্ট ক্রিকেটে টানা ২১ টেস্ট হারার পর দলীয় অর্জনের প্রথম ড্র আসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৪ সালে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে সফরে পাওয়া সেই ড্র থেকে মূলত টেস্ট ক্রিকেটে ভালো কিছুর শুরু।
২০০৪ সালেই আবারও ড্রয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে। সেই টেস্টেই প্রথম বাংলাদেশের হয়ে কোনো টেস্টে তিন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি তুলে নেন। আর পরের বছর নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট জয় ধরা দেয় বাংলাদেশের হাতে। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া সেই জয়ের পরের টেস্ট ড্র হওয়ায় একইসঙ্গে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তবে জিম্বাবুয়ে ততদিনে ক্ষয়িষ্ণু ক্রিকেট শক্তি। এক সময়ের ক্রিকেট পরাশক্তি জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ে নানা কারণে। তবে বাংলাদেশের জন্য এর পরের সময়টা খুব একটা ভালো যায়নি।
প্রায় ৪ বছর পর আবার জয়ের দেখা। এবার প্রতিপক্ষ আরেক ক্ষয়িষ্ণু ক্রিকেটশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় সারির সেই দলকে দুই ম্যাচেই হারিয়ে নিজেদের র্যাঙ্কিংয়ে কিছু পয়েন্ট যুক্ত হয় বাংলাদেশের। তবে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের নড়বড় হয়নি। শুধু টেস্ট থেকে নির্বাসনে থাকা জিম্বাবুয়ের অনুপস্থিতির কারণে নয়-এ উঠে আসে বাংলাদেশ। এই জিম্বাবুয়েকেই সর্বোচ্চ পাঁচবার টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সদ্য সাবেক প্রধান কোচ ও বর্তমান লঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের দলটি ওয়ানডের সাফল্য অনুবাদ করেছে টেস্ট ক্রিকেটেও। যদিও তা আশানুরূপ নয়। কিন্তু, বড় বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটেও বুক চিতিয়ে লড়াই করার সামর্থ্য যে এই দলের আছে তা অন্তত স্পষ্ট হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ১০৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে জয় এসেছে ১০টিতে, ড্র ১৬টি, হার ৮০টি ম্যাচে। এই পরিসংখ্যান কিছুতেই সুখকর হতে পারে না। তবে শেষ কয়েক বছরে দৃশ্যমান উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের শততম টেস্টে জয়, এছাড়াও কিছু দারুণ ড্র ম্যাচ মিলিয়ে সম্প্রতি সাফল্যের বিচারে বেশ এগিয়েছে বাংলাদেশ। আজ পর্যন্ত মাত্র ১০ টেস্টে জয় পেলেও সম্প্রতি এই হার বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ধবল-ধোলাই হওয়ার আগে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে ভালো কিছু করার ফলই এবার হাতেনাতে পেলো র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি দিয়ে। যদিও গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে টেস্ট ইতিহাসে নিজেদের সেরা অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ ছিল মুশফিক বাহিনীর সামনে।
আইসিসি বার্ষিক র্যাঙ্কিংয়ে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধঃপতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। সব ধরনের ক্রিকেটেই তাদের চেয়ে ভালো করছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক হিসাব অন্তত তাই বলে। নতুন র্যাংকিংয়ে ২০১৭-১৮ মৌসুমে খেলা টেস্টগুলোর ভিত্তিতে রেটিং পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই মৌসুম ছাড়াও আগের দুই মৌসুমের ৫০ ভাগ হিসাবে রাখা হয়েছে। এই সময়েই এসেছে টেস্ট ক্রিকেটে স্মরণীয় কিছু সাফল্য। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ১৮টি টেস্ট। তিন জয়ের পাশাপাশি হেরেছে ১০টিতে আর ড্র পাঁচ ম্যাচে। তিন জয়ের প্রতিপক্ষ যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। সবগুলো সিরিজ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে ২৮ ম্যাচ খেলে একইসময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় আর ড্র বাংলাদেশের সমান হলেও হারের সংখ্যা অনেক বেশি (১৮টি)।
অনেকদিন থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিলো বাংলাদেশ। শেষ র্যাংকিং বাংলাদেশের জন্য সেই উন্নতির স্বীকৃতি। বাংলাদেশ এখন কোনো টেস্ট না খেলেই ৪ বাড়তি রেটিং পয়েন্ট পেয়েছে। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং পয়েন্ট কমেছে পাঁচ। বাংলাদেশের রেটিং ৭৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬৭। তবে হঠাৎ করে পাওয়া এই অর্জন নিয়ে খুব বেশি খুশি হওয়ার সুযোগ নেই। শীর্ষে থাকা ভারতের পয়েন্ট ১২৫, বাংলাদেশের চেয়ে ৫০ পয়েন্ট বেশি। আরও বহুদূর যেতে হবে সাকিবদের।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৯ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৮
আরআর