কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কাটলেই কি আর দলে জায়গা হয়ে যাচ্ছে? অন্তত জাতীয় দলে ‘পজিশন’ ধরে রাখা নিয়ে ক্রিকেটারদের প্রতিযোগিতা সেটা বলছে না। এই অবস্থা বিবেচনায় মুক্ত আশরাফুলের সামনেও এখন আরও কঠিন লড়াই।
এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন আশরাফুল। ১৩ আগস্ট নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বুক থেকে যেন পাথর সরে যাচ্ছে তার। সেখান থেকেই দারুণ উচ্ছ্বাসে বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সুযোগ পাচ্ছি। বেশ ভালো লাগছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেললেও জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হতে আর কোনো বাধা রইল না। ’
ফেরার পথটা যে আরও লড়াইয়ের, সেটা ভালোই জানেন জাতীয় দলের একসময়ের ‘পোস্টারবয়’। সেজন্যই কিনা নিজেকে শান দিতে খেলতে গেছেন লন্ডনের স্থানীয় লিগে। বললেন, ‘ক্রিকেটে ফিরতেই লন্ডনে আছি। এখানে একটা লিগে খেলছি। ব্যায়াম করছি। আমার এখন অনেক বেশি ম্যাচ খেলা দরকার। সেপ্টেম্বরে জাতীয় লিগ টার্গেট করছি। ওখানে ভালো করার জন্য চেষ্ট করছি। লন্ডন আসার আগে তিন মাস আশিকের (আশরাফুলের বন্ধু এবং নারী ক্রিকেট দলের সাবেক সহকারী কোচ) সঙ্গে আমার এলাকায় কঠিন পরিশ্রম করেছি। প্রিমিয়ার লিগে (বিগত আসরে) পাঁচটা সেঞ্চুরি করেছি। এখন দেখা যাক সামনে কী হয়। ’
জাতীয় দলে ফেরার জন্য নিজের সর্বোচ্চটি উজাড় করে চেষ্টা চালাচ্ছেন জানিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ফেরার। ’
এটা তো আশরাফুলের ভাষ্য। নির্বাচকরা কী ভাবছেন একসময়ের ‘আশার ফুল’কে নিয়ে? প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলছিলেন সে প্রসঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ও অনেক দিন ধরেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেই। সুতরাং ঘরোয়া ক্রিকেটে সব ফরম্যাটে ওকে খেলতে হবে। ওর ফিটনেস আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য ঠিক আছে কি-না, সেটা দেখতে হবে। সাসপেনশন যাওয়ার পর সব ফরম্যাটে খেলুক, তারপর এক বছর যাওয়ার পর বুঝতে পারবো ওর ফিটনেস কোন লেভেলে আছে। ’
'আশরাফুল যদি ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ঘরোয়া লিগে ভাল খেলেন সেই ক্ষেত্রে তাকে কোন ফরম্যাটে ভাবা হবে?' এমন প্রশ্নে নান্নুর উত্তর, ‘ওকে কোন ফরম্যাটের জন্য আমরা চিন্তা করবো, সেটা আমাদের দেখতে হবে। আমরা এখন তেমন কোনো চিন্তা করছি না। তারপরও সামনে ঘরোয়া মৌসুমটা আমরা দেখবো, তারপর চিন্তা করবো। ’
আশরাফুলের বয়স এখন ৩৪ বছর। বয়স বিবেচনায় জাতীয় দলে ফেরা কঠিন হয়তো। কিন্তু প্রধান নির্বাচক তেমনটি মনে করেন না, ‘বয়স কোনো বিষয় নয়। আপনার যদি ফিটনেস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানের হয়, তাহলে যে কোনো প্লেয়ারই আসতে পারে। আমি বলবো সে আমাদের দেশের জন্য অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছে। ওর তো অবশ্যই সামর্থ্য আছে। তবে আমরা এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। ’
টেস্টের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান, রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এবং ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর ম্যাচের তারকা আশরাফুলের বিশাল ভক্তশ্রেণী আছে দেশে। তাদের অনেকেই আবার তাকে জাতীয় দলে দেখতে চান। অনেকে তো তাকে পারলে এখনই দলে ঢুকিয়ে দিতে চান।
এ বিষয়ে নান্নুর ভাষ্য, ‘এই মুহূর্তে যদি বলতে হয় তাহলে বলবো, এই মুহূর্তে দলে কোনো জায়গা নেই। আমাদের যেই ফিটনেস লেভেল আছে, এইচপি থেকে শুরু করে ‘এ’ দল ও জাতীয় দলের ফিটনেসের সঙ্গে কিন্তু সে অ্যাটাচড নয়। এই জায়গায় আসতে হলে তাকে কিছু সময় দিতে হবে। এই লেভেলটা যদি থাকে তাহলে চিন্তা করা যাবে। সুতরাং এই মুহূর্তে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি না। ’
শুধু ফিটনেস কিংবা ঘরোয়া লিগে ভাল করলেই হবে না। আশরাফুলকে জাতীয় দলে এখন যারা আছে তাদের সঙ্গেও লড়াইয়ে নামতে হবে। বর্তমান দলে তার ব্যাটিং পজিশনে যারা খেলেন তাদের চেয়েও ভালো খেলে দলে ঢুকতে হবে বলে মত প্রধান নির্বাচকের, ‘ফিটনেসটা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পর্যায়ে আনতে হবে। আর পারফরম্যান্সটা অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো হতে হবে। কারণ সে যেই জায়গায় ব্যাট করে, সেই জায়গায় অনেক ক্রিকেটার স্থায়ী হয়ে গেছে। জাতীয় দলের জন্য কোনো প্লেয়ারকে যদি দেখা হয়, তাকে বিশেষ পারফরম্যান্স করেই আসতে হবে। ’
সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় আশরাফুলের অবস্থান অবশ্য কিছুটা সুবিধাজনক বলাই যায়। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পাঁচটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন আশরাফুল। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের এক আসরে তিনি মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ২৩টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪৭.৬৩ গড়ে রান তুলেছেন তিনি।
২০১৪ সালের জুনে বিপিএলের দুর্নীতিবিরোধী ট্রাইব্যুনাল আশরাফুলের ওপর ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ডিসিপ্লিনারি প্যানেল শাস্তি কমিয়ে পাঁচ বছরে নামিয়ে আনে। তবে ওই দুই বছর তাকে বিসিবি বা আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
এমএইচএম/এইচএ/