আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার একটি তদন্তকারী ইউনিটের কাছে এক সাক্ষাৎকারে নিজের অপরাধ মেনে নেন কানেরিয়া। ক্ষমা চান এসেক্স সতীর্থের কাছে।
কানেরিয়া বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত নিতে আমি নিজেকে শক্ত করেছি। কেননা মিথ্যের ওপর আপনি সারাজীবন বেঁচে থাকতে পারবেন না। ’
সে সময় ফিক্সিংয়ের জন্য বাজিকর আনু ভাটের কাছ থেকে ৬ হাজার পাউন্ড নিয়েছিলেন ওয়েস্টফিল্ড। ব্যাপারটি আঁচ করতে পারলেও থামাননি কানেরিয়া। পরে ওয়েস্টফিল্ড নিজের দোষ স্বীকার করলে সাউথ-ইস্ট লন্ডনের বেলমার্শ জেলে দুই মাস থাকতে হয় তাকে। ২০০৯ সালে ডারহামের বিপক্ষে ৪০ ওভারের ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারে ১২ রান দেওয়ার কথা ছিল। পরে ১০ রান দেন তিনি। তবে অর্থ ঠিকই পেয়েছেন।
বুধবার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের সঙ্গে ওয়েস্টফিল্ডের কথা হলে তিনি বলেন, ‘স্পট-ফিক্সিংয়ে ঘটনাটি আমার পুরো জীবন ওলট-পালট করে দিয়েছে। তবে এমন ভয়ানক ভুলের জন্য আমি কাউকে দোষ দেব না। কিন্তু মূল সত্যটা এখন বেরিয়ে এসেছে। ফলে আমার এখন চলাচলে আরও সুবিধে হবে। আমি আশাকরি দানিশ (কানেরিয়া) এমনটি করে ভালোই করেছে এবং আমি তার ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানাই। ’জানা যায় আনু ভাটের সঙ্গে সে সময় ওয়েস্টফিল্ডকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কানেরিয়া। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে পুলিশ কানেরিয়াকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
কিন্তু পরোক্ষভাবে কানেরিয়ার দোষ পেয়ে ইসিবি তাকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে। বলা হয়েছিল তিনি ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর।
অপরাধী সত্ত্বেও কানেরিয়া এখনও তার দেশের টেস্ট ক্রিকেটে শীর্ষ স্পিন বোলার। যেখানে ৬১ টেস্টে ২৬১টি উইকেট নিয়ে তিনি স্পিনার হিসেবে সবার ওপরে। তিনি পরবর্তীতে ইসিবির নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দু’বার আপিল করেও হেরে যান।
আল জাজিরার সাক্ষাৎকারে কানেরিয়া বলেন, ‘আমি দানিশ কানেরিয়া। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক ২০১২ সালে আমার বিরুদ্ধে ওঠা দুটি অভিযোগ আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। আমি মারভান ওয়েস্টফিল্ডের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার এসেক্স সতীর্থ, আমার এসেক্স ক্রিকেট ক্লাব, আমার এসেক্স ক্রিকেট ভক্তদের কাছেও। আমি পাকিস্তানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। ’
কানেরিয়া আরও বলেন, ‘মারভান সে সময় আমাকে বলেছিল আমি ধনী ক্রিকেটার হতে চাই। আমি তখন এসেক্সে উচ্চ বেতনে খেলতাম এবং আমি তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারও ছিলাম। এছাড়া আমার জীবনযাপন ছিল খুবই উন্নত। সুতরাং সেও চেয়েছিল অর্থ আয় করতে। ’
‘আমার মনে হয়েছিল সে আনু ভাটের টার্গেটে পড়েছিল এবং তার ভেতরও লোভ জেগেছিল। একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে আমার মারভানকে বলা উচিৎ ছিল ঐ ব্যক্তি সন্দেহভাজন। ’
‘ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসিকে আমি এই ব্যাপারটি জানায়নি বলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি তাদের বলিনি এই ব্যক্তি যুক্তরাজ্যেই আছে। ’
২০১০ সালে সর্বশেষ পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে খেলেছিলেন কানেরিয়া। এছাড়া সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০১২ সালে। পরবর্তীতে ইসিবির নিষেধাজ্ঞাকে আইসিসি মেনে চলতে বলেছিল সব আন্তর্জাতিক বোর্ডকে।
৩৭ বছর বয়সী কানেরিয়া আবারও ক্রিকেটে ফিরতে চান, যা তাকে জাতীয় নায়ক বানিয়েছিল, ‘আমি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম এবং সে সময় আমি প্রচুর অর্থ আয় করেছিলাম। তবে আমি আমার বন্ধুদের হারালাম, ভক্তদের থেকে আমি যে সম্মান পেয়েছিলাম তাও। সবকিছুই হারালাম। আমি মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে এবং আমি আরও দিতে চাই। ’
‘ইসিবি, আইসিসি ও অন্য বোর্ডগুলোর কাছে আমি আরও একটি সুযোগ চাই। তরুণ ক্রিকেটারদের আমি শেখাতে চাই ভুল করলে এমন শাস্তি পেতে হবে। আমি বলতে চাই দ্রুত অর্থ উপার্যন করতে গেলে আমার মতো অবস্থা হবে। ’
এদিকে অপরাধের কথা আগে কেন স্বীকার করেননি কানেরিয়া? এমন প্রশ্নে তিনি তার বাবার ক্যান্সারের কথা উল্ল্যেখ করেন। যিনি ২০১৩ সালে মারা যান, ‘তার স্বাস্থ্য দিনকে দিন খারাপ হচ্ছিল। আমি তার কাছে বলতে পারছিলাম না আমি ভুল করেছি। আমি পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করায় সে আমার জন্য গর্ব করতো। আমি আমার বাবা কাছেও ক্ষমা চাই, যে ছিল আমার কাছে আদর্শ। আমি সবসময় তার ছবি আমার কাছে রাখি। ’
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮
এমএমএস