সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে বেশ বাজে সময় যাচ্ছে দেশসেরা ওপেনার তামিমের। সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে তার ব্যাট থেকে রান এসেছে মাত্র ২৯.৩৭ গড়ে।
বিশ্বকাপে দলের প্রথম তিন ম্যাচ শেষেই চাপের কথা স্বীকার করেছিলেন তামিম। কিছু ম্যাচে ভালো শুরু করেও ধরে রাখতে পারছিলেন না। ব্যাটে স্ট্রাইক রেটও খুব বাজে। সেই অবস্থা এখনও চলছে। এমন বাজে অবস্থার মধ্যেই সাবেক গুরু সিডন্সের কাছ থেকে পরামর্শ পেলেন তিনি।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কোচ সিডন্স সম্প্রতি ক্রিকইনফোকে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা সিরিজে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত তামিম বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল বলেই মনে হয়েছে। প্রথম ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গার অসাধারণ এক ইয়র্কারে পরাস্ত হলো এবং পরের ম্যাচে অপ্রয়োজনীয় শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিল। সে গায়ের জোরে বল মারতে চাইছে যার কোনো প্রয়োজনই নেই। আমার মনে হয় সে কিছুটা অধৈর্য হয়ে পড়েছে। ’
তামিমের বাজে ব্যাটিংয়ের পেছনে বোলারদের ভালো বোলিংকেও দায়ী করছেন সিডন্স, ‘প্রতিপক্ষ দলগুলো তার বিপক্ষে ভালো বোলিং করছে আর এতে তার বাউন্ডারি হাঁকানো কমে গেছে। তাই খেলাটা আরেকটু মেলে ধরতে তার আরেকটু ধৈর্যধারণ করা দরকার। তাকে ৫০ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করার পরিকল্পনা সাজাতে এবং প্রথম ২০ ওভারেই সব রান করার চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ’
তবে তামিমের ব্যাটিংয়ে কোনো সমস্যা দেখেন না সিডন্স। কিন্তু টেকনিকে কিছু হালকা পরিবর্তন আনলে সেটা বর্তমান সমস্যা সমাধানে কাজে দিতে পারে বলে মত তার। সিডন্স বলেন, ‘টেকনিক্যালি তামিম ঠিক আছে। আমি তার সামনের পা আরেকটু সোজা করতে বলবো। কিন্তু আমার মনে হয় সে আগের মতোই একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়। সে অতীতে দেশকে অনেক দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়েছে। ভবিষ্যতেও তাই করবে। ’
বাজে ফর্ম নিয়ে চিন্তিত তামিম সাবেক গুরুর কাছে শ্রীলঙ্কা সিরিজে নিজের ব্যাটিংয়ের কিছু ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়েছিলেন। সেসব বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন সিডন্স, ‘শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রায় প্রতিটা বল আমি কাছ থেকে দেখেছি কারণ সে (তামিম) ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে আমার কাছে মতামত জানতে চেয়েছিল। ’
তামিমকে দেওয়া পরামর্শ নিয়ে সিডন্স বলেন, ‘প্রথম ১০ ওভার দেখেশুনে পাড়ি দিতে হতো এবং এরপর বলের টার্ন কমে যেত। এতে সে ভালো ইনিংস গড়তে পারতো। ভালো লেন্থের বলে অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলাও সহজ হয়ে যেত। গত বিশ্বকাপেও অধিকাংশ বোলার তার বিপক্ষে শর্ট বল করেছে। ’
সিডন্স মনে করেন, নিজের কাঁধে বাড়তি চাপ নিচ্ছেন তামিম। তাকে নিয়ে বাড়তি প্রত্যাশার চাপও তার ফর্মে প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তামিম, সাকিব এবং মুশফিক দলের সেরা পারফর্মার হওয়ায় তাদের প্রতি সবার প্রত্যাশাটা বেশি। সবার প্রত্যাশা যেমন, নিজেকে নিয়ে তামিমের প্রত্যাশাও নিশ্চয় তেমনই ছিল। আমার মতে, সবার মতো তামিমও হতাশ। আমার ধারণা, তার বাজে বিশ্বকাপ আসলে দুর্ভাগ্য। ’
ওপেনিংয়ে ব্যাট করা এমনিতেই কঠিন। মিডল অর্ডারের চেয়ে বলও সুইং করে বেশি। এসময় টিকে থাকা কঠিন। কিন্তু এই কাজটা বহুদিন থেকেই সাফল্যের সঙ্গে করে আসছেন তামিম। গত বিশ্বকাপে ভাগ্যের ছোঁয়া পাননি তামিম আর বোলাররা কিছু ভালো বল করেছেন। এমন কিছু প্রতিকূল মুহূর্তের কারণেই তামিমের বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা এত বাজে হয়েছে বলে মত সিডন্সের।
তবে ক্যারিয়ারে বাজে ফর্মের খপ্পরে এর আগেও পড়েছেন তামিম। প্রতিবারই সাফল্যের সঙ্গে ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন। সিডন্সের কথা অনুযায়ী, তামিমের একটু ভাগ্যের পরশ দরকার, তবে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে ধৈর্য। কারণ, বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে আজও তার কোনো বিকল্প নেই। আরও কয়েক বছর তাকে দলের ভীষণ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
এমএইচএম