ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মুলতান টেস্টে কেঁদেছিলাম, আর কাঁদতে চাইনি: বাশার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
মুলতান টেস্টে কেঁদেছিলাম, আর কাঁদতে চাইনি: বাশার বাশারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম টেস্ট জয় পায়। ছবি:সংগৃহীত

ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে আভিজাত্যের খেলা টেস্ট ক্রিকেট। ক্রিকেটটা সৃষ্টিই হয়েছিল এই টেস্ট দিয়ে। তাই সাদা পোশাকের ইতিহাসটা বেশ সমৃদ্ধই বটে। তবে সেই তুলনায় বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসটা এখনও বেশ সাদামাটা। টেস্টে খেলার যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার বা টেস্টে ক্রিকেট যে উদ্দেশ্যে খেলা হয় সেটা কিন্তু পরিস্কার। তবে নিজেদের ১৯ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সেই লক্ষ্যের কাছে যেতে পারেনি বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ১৪তম জয় তুলে নিয়েছে। একটা সময় বাংলোদেশের এই টেস্ট জয়ের সংখ্যাটা ছিল শূন্য।

এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় দিয়েই প্রথম টেস্টে জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। আর এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট জিততে হয় আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জন্য।

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নিজেদের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারেনি বাংলাদেশ। যে কয়েকটি টেস্ট জয় করেছে তার অর্ধেকই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বড় দল বলতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি করে জয় রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৪টি টেস্ট জিতলেও বাকি কোন দলে সঙ্গে জয় নেই বাংলাদেশের।

হাবিবুল বাশার-ফাইল ফটো

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের অধিনায়ক ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন। বর্তমানে তিনি জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করছেন। টাইগারদের প্রথম টেস্ট জয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক এই টাইগার অধিনায়ক। জানিয়েছেন সেই সময়ের কিছু স্মৃতি।

হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আমরা তো ২০০০ সাল থেকে টেস্ট খেলা শুরু করেছি। যখন টেস্ট খেলা শুরু করেছি তখন কিন্তু বাকি দলগুলা ১০০ টেস্ট খেলে ফেলেছে। আমাদের অভিজ্ঞতার পার্থক্যটা ছিল স্পষ্ট। আমার যখন টেস্ট খেলেছি তখন ওদের একজন প্রেয়ারের টেস্ট খেলার সংখ্যা আমাদের ১৫ জনের প্লেয়ারের চেয়ে বেশি ছিল। আমরা অনেক পেছন থেকে শুরু করেছি। তারপরও মুলতান টেস্টের কথাটা খুব মনে পড়ে। অনেকে বলে টেস্টটা জিতলে আমরা এগিয়ে যেতাম, আমি সেটা বলবো না, তবে জয়টা আমাদের খুব দরকার ছিলে। কারণ টেস্ট ম্যাচ জেতাটা সহজ ছিল না, আমরা যে জিততে পারি এই বিশ্বাসটা আমাদের খুব দরকার ছিল। যেহতু বাকি দলগুলা এগিয়ে ছিল, তাই ম্যাচ জেতাটাও মুশকিল ছিল। ’

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তবে সেই সময়ে টাইগাররা ভালো ক্রিকেট খেলা শুরু করে। যার কারনেই জয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন তখনকার দলনেতা বাশার।

সিরিজ শুরুর আগের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা ২০০০ সালে যে জিম্বাবুয়ে দলের সঙ্গে খেলেছিলাম, ২০০৪ সালে ওই জিম্বাবুয়ে টিম ছিল না। এখনকার জিম্বাবুয়ে দলের চেয়ে ২০০৪ সালের জিম্বাবুয়ে দলটা অনেক ভালো। কিন্তু আমরা একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম যদি সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারি, তবে টেস্ট ম্যাচ জেতা সম্ভব। তখন অমরা খুব ধারাবাহিক ক্রিকেটে খেলছিলাম। বড় দল গুলোর সাথে জিতেছি। ’

‘সিরিজ শুরুর আগে কথা ছিল আমাদের একটা ব্রেক দরকার। আমরা সবসময়ই নামতাম এমটা পরিসংখ্যান নিয়ে যে, বাংলাদেশ এতগুলো টেস্ট ম্যাচ খেলেছে জয়ের সংখ্যা শূন্য, ড্রয়ের সংখ্যা দুটো, হারের সংখ্যা বেশি। জয়ের তালিকায় কোনো নাম্বার ছিল না। আমরা খুব ডেসপারেট ছিলাম ওখানে একটা নাম্বার লাগবে, জয়ের তালিকায় বাংলাদেশ...ওয়ান উইন। সবার মধ্যে এই জিনিসটা কাজ করেছে, দিস ইজ দ্য সিরিজ, এটা মিস করলে হবে না। সবাই খুব ডিটারমাইন ছিলাম, ডেসপারেট ছিলাম। ডেসপারেট শব্দটা ব্যবহার করবো কারণ আমরা সবাই ভীষণ ভাবে জিততে চাইছিলাম। ’

সদ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট জেতার পর বাংলাদেশের উল্লাস-ফাইল ফটো

ম্যাচটা বেশ ভালো ভাবেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তখনকার সময়ে টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটাও গড়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। জয়ের জন্য সব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিল। শুধু চ্যালেঞ্জটাই নেয়ার বাকি ছিল, যেটা অধিনায়ক নিয়েছিলেন।

বাশারের ভাষায় প্রথম টেস্ট জয়ের অনুভূতি, ‘টেস্ট যখন চলছিল তৃতীয় কিংবা চতুর্থ দিনে কোচ ডেভ হোয়াটমোর চিন্তা করছিলেন ইনিংস ঘোষণা করবেন কিনা। আমি সুযোগটা নিয়েছিলাম। কারণ সময় ছিল হাতে, যদি টার্গেটটা চেজ করে ফেলে। আমি চিন্তা করছিলাম হারলে হারবো অনেক ম্যাচ হেরেছি দরকার হলে এই ম্যাচও হারবো, তবে জয়ের জন্য আমার সময়টা দরকার ছিল। সৌভাগ্যক্রমে আমরা ওই দিনই তিনটা উইকেট পেয়ে গিয়েছিলাম। মাশরাফি ভালো ও তাপস বৈশ্য ভালো বল করেছিল। ’

‘দ্বিতীয় দিনে কিন্তু একটা জুটি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, টাটেন্ডা টাইবু ভালো ব্যাট করছিল। আজকে জিততেই হবে, যদি জিততে না পারি এর আগে একবার কেঁদেছিলাম মুলতান টেস্টে আর কাঁদতে চাই না। ইমোশনাল ব্যাপার ছিল সবার জন্য। জেতার পর সবারই খুশির মুহূর্ত আসে। আসলে কিছু খুশির মুহূর্ত আলাদা করে রাখবো সবার কাছে এমন ছিল। ’

২০০৫ সালের টেস্ট জয়টা ছিল বাংলাদেশের সেরা একটি মুহূর্ত। কিন্তু ১৪ বছর পর ২০২০ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই বাংলাদেশের টেস্ট জিততে হয় মনবল বাড়াতে। যেখানে বাংলাদেশ জিম্বাবুকে হারালে একটা সাধারণ জয়ের অনুভূতি পাওয়ার কথা, সেখানে এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া একটি জয় স্বস্তির কারণ। এই জয়ের নেই কোনো পার্থক্য, শুধুই অনুভূতির পার্থক্য। এটা একটি টেস্ট জয়ের পার্থক্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
আরএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।