বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. মঈনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে পুরো দেশেই শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মাশরাফি এক পোস্টে লিখেছেন, 'সবাইকে শোকে ভাসিয়ে চলে গেলেন এক মহৎ প্রাণ ডাক্তার! করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মানবিক ডা. মো. মঈন উদ্দিন চলে গেলেন না ফেরার দেশে! তিনি ছিলেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা। তাঁর এই মৃত্যু হৃদয় বিদীর্ণ করার মতো।
মাশরাফি আরও লিখেছেন, 'বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ছোবলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও আক্রান্ত। দেশের এই মহাক্রান্তিকালে ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন দেশের মানুষের জন্য আত্মোৎসর্গীকৃত। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত একজন মানবসেবী হিসেবে মানুষের সেবা করে গেছেন তিনি। নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে তিনি চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন। '
ডা. মঈনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাশরাফি লিখেছেন, 'মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি তার এই আত্মত্যাগ শব্দ-বাক্যে প্রকাশের মত নয়। মানবতার জয়গান গাওয়া ক্রান্তিকালের এই যোদ্ধাকে নিশ্চয় গোটা জাতি আজীবন পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সবশেষে আমি এই বীরযোদ্ধাকে জানাচ্ছি- "স্যালুট"। '
চলতি বছরের ৫ এপ্রিল (রোববার) সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে ওই চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তিনিই সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী। পরে ওই রাতেই নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় চিকিৎসকের বাসা লকডাউন করে দেয় প্রশাসন। পরদিন ৬ এপ্রিল (সোমবার) পুরো হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন করা হয়। এরপর তার অবস্থার অবনতি হলে ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাত ১১টার দিকে তাকে নগরের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে (সদর হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। ৮ এপ্রিল (বুধবার) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ডা. মঈনের পরিবারের ইচ্ছায় তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডা. মঈনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার (১৩ এপ্রিল) তাকে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। হাসপাতালে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডা. মঈন উদ্দিন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। তার চেম্বার ছিল নগরের সুবহানিঘাট ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখানে তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন ও রোগী দেখতেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে কোনো প্রবাসী করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন।
করোনায় মৃত্যুবরণকারী ডা. মঈন সিলেটের সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিদ্দিক আলীর ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক। ডা. মঈন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ইন্টারনাল মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২০
এমএইচএম