চট্টগ্রাম: এক সপ্তাহ ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। দুয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
শীত নিম্ন আয়ের, দুস্থ মানুষের জন্য নিয়ে এসেছে বিপর্যয়। গরম কাপড়ের অভাবে অসহায় জীবনযাপন করছে অনেকে।
ষোলশহর রেল স্টেশনে বিকলাঙ্গ ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মাদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কাজের খোঁজে সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলাম দুই বছর আগে। কিছুদিন কাজও করেছি। টাকা পাঠিয়েছি পরিবারের জন্য। কিছুদিন যেতেই এক পা ও এক হাত অবশ হয়ে যায়। কাজ করতে পারি না। পরিবারের কাছে টাকাও পাঠাতে পারি না। তাই পরিবারও খবর নেয় না। একটা চাদর আছে, সেটা জড়িয়ে কোনও রকম রাতটা কাটিয়ে দেই’।
এক পা হারানো পঁচাশি বছরের বৃদ্ধ জয়ন্ত দে। জীবিকার তাগিদে ফটিকছড়ি থেকে এসেছেন ৮ বছরের বেশি সময় ধরে। পড়ে আছেন রেলস্টেশনে। কেউ দয়া করে কিছু দিলে খান, না হয় উপোস করেই দিন পার করেন। তিনি বলেন, ‘সবকিছু ছেড়ে যে পরিবারের জন্য বের হলাম, সে পরিবারই খবর নিচ্ছে না ৮ বছর। কেউ দিলে খাই, না দিলে না খেয়েই পড়ে থাকি। কিছু মানুষ আসেন তারা মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে যান। তাদের দেওয়া খাবারেই ক্ষুধা মিটছে। এভাবেই শীত আর মশার যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি’।
বৃহস্পতিবার নগরে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সঙ্গে যোগ হয়েছে ঠান্ডা বাতাস। সকালবেলা থাকছে কুয়াশায় ঢাকা। তীব্র শীতের কারণে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের লোকজন।
শীত বেড়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন রিকশাচালকেরা। প্রতিদিন ভোরে রিকশা নিয়ে বের হন রিকশাচালক আব্দুল মোতালেব। তিনি বলেন, ‘আমি ভোরে বের হই। কিছুদিন ধরে ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতে দেরি হচ্ছে। দুপুরের দিকে একটু রোদের দেখা মিললেও, দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই ঠান্ডা পড়ে। তাই আগেভাগে ঘরে চলে যেতে হয়। তাছাড়া বেশি ঠান্ডায় কষ্ট হয় রিকশা চালাতে। কমে গেছে উপার্জনও’।
ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় ফুটপাত ও খোলা আকাশের নিচের থাকা দরিদ্র মানুষেরা কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কোতোয়ালী এলাকার ভ্রাম্যমাণ দোকানদার এনায়েত উল্লাহ। গাড়ি চালকদের কাছে সকালের নাস্তা ও চা বিক্রি করেন তিনি। শীতের কারণে তার দোকান খুলতে বেলা হয়ে যায়। যার কারণে বেচাকেনাও তেমন হয় না। তিনি বলেন, আগে ভোরে দোকান খুলতাম। ভোরে বিক্রি ভালো হয়। কিন্তু এখন শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় লোকজন খুব একটা আসে না। আবার ঠান্ডায় তাদেরও বসে থাকতে কষ্ট হয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে বেচাবিক্রি বেশি হতো। কিন্তু ঠান্ডায় রাস্তাঘাটে লোকজন কম থাকে। তাই বিক্রিও হয় না তেমন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া উত্তর অথবা উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৩
বিই/টিসি