চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা অঞ্জলী রানী দেবী হত্যার আট বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি। থানা, ডিবি ও পিবিআই ঘুরে বর্তমানে মামলা তদন্ত করছেন ঢাকার এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাইশের তেলিপট্টি লেইন এলাকায় দুর্বৃত্তের হামলার আহত হন অঞ্জলী রানী দেবী (৫৭)। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় একই দিন বিকালেই পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন স্বামী ডা. রাজেন্দ্র চৌধুরী। মামলায় সন্দেভাজন কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ২০১৫ সালের ১৩ জুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার সাবেক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাকে গ্রেফতার করেছিলেন ডিবি। ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে কোনো তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছিলেন ডিবি কর্মকর্তারা। ডিবি পুলিশের নিষ্ফল তদন্ত শেষে দুই বছর আগে মামলাটির তদন্ত ভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর হাতে। দুই বছরে তারাও অগ্রগতি করতে পারেনি। গত দুই মাস আগে পুলিশ হেডকোয়াটারের নির্দেশে মামলাটি ঢাকায় এন্টি টেররিজম ইউনিটকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নিহত অঞ্জলীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজারে। তার স্বামী ডা. রাজেন্দ্র চৌধুরী বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ এলাকায়। তাদের দুই মেয়ে অর্পিতা ও অদ্বীতি। সেইসময় অর্পিতা এমবিবিএস পাস করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন। আরেক মেয়ে অদ্বীতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করেছিলেন।
ঘটনার পর পুলিশ জানায়, বাড়িওয়ালা, নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলার পর কর্মস্থলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পারিবারিক বিরোধ ও আর্থিক লেনদেন- এই তিনটি বিষয়কে ভিত্তি করেই তদন্ত শুরু করা হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডে চারজন অংশ নিয়েছিলো বলেও ওই সময় জানানো হয় । তবে গত আট বছরে তাদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী । তবে এই হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত ও পেশাদার খুনিদের হাতে হয়েছিলো বলে শুরু থেকেই ধারণা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ।
এদিকে অঞ্জলী রানীর হত্যার পর তাঁর স্বামী ডা. রাজেন্দ্র চৌধুরী চট্টগ্রাম নগর ছেড়ে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলায় চলে গেছেন। এখন তিনি সেখানে মেয়ের সঙ্গে বসবাস করছেন।
অঞ্জলী রানীর স্বামী ডা. রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দিনের আলোতে প্রকাশ্যে আমার অঞ্জলীকে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ আট বছরও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি। এতে আমাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও অঞ্জলীর সহকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। আট বছরে কোনও আসামি গ্রেফতার করা হয়নি। আমার ৬৮ বছর বয়স হয়েছে, আমার কখন মৃত্যু হয় ঠিক নেই। মৃত্যুর আগে অঞ্জলির হত্যাকারীদের দেখে যেতে চাই।
তিনি আরও বলেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলো মাঝেমধ্যে আমাকে ডাকে, আমার থেকে কথাবর্তা বলে । তারা বারবার একই কথা জানতে চান। আমি কাউকে সন্দেহ করি কি-না। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই। আমার স্ত্রীকে হত্যার পিছনে জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত বলে ধারণা করছি। কারণ আমার স্ত্রীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তখন একই কায়দায় মুক্তমনা ব্লগারদেরও হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।
ঢাকায় এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে ডেকেছে, আমি মেহেরপুর থেকে সুযোগ মতো যাব। তারা একই ধরনের প্রশ্ন করবে? আমার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হলেও মেয়ের সঙ্গে মেহেরপুরের মুজিবনগরে একাকী জীবন কাটাচ্ছি।
মামলার বিষয়ে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) পুলিশ সুপার আসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, অঞ্জলী রানী হত্যার মামলাটি কিছু দিন আগে আমরা পেয়েছি। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি, মামলার বাদী এখনো আমাদের কাছে আসেন নাই। মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছে কিন্তু পুরাতন মামলা হওয়াতে সময় লাগবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৩
এমআই/পিডি/টিসি