চট্টগ্রাম: বিশ্বমানের ফ্যাশন টেকনোলজির বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার নতুন দুয়ার খুলছে চট্টগ্রামে। শনিবার (২১ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি)’ নামের বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মার্চে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। চারটি বিভাগে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়েছে ইউজিসি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) খুলশীর বিজিএমইএ ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য জানান সিবিইউএফটি ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিবিইউএফটির উপাচার্য মো. ওবায়দুল করিম, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এমএ সালাম, এসএম আবু তৈয়ব, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, এএম চৌধুরী সেলিম, মোহাম্মদ ফরহাত আব্বাস, এমডি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এসএম সেজাদুল ইসলাম, বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম, বিজিএমইএ পরিচালক এম আহসানুল হক, আবদুল মান্নান রানা প্রমুখ।
টাইগারপাসের নেভি কনভেনশন হলে বিকেল তিনটায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। গেস্ট অব অনার থাকবেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, ২০০২ সালের ২৭ অক্টোবর বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএফটি) নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। ২০ বছরে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা এবং অ্যাপারেল মার্সেন্ডাইজিংয়ে সার্টিফিকেট কোর্স করে দেশে ও বিদেশে পোশাক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী জাপানে বাংলাদেশি টাকায় ৭ লাখ টাকা বেতনে চাকরি করছে। অনেকে নিজস্ব বুটিক হাউস, ফ্যাশন হাউস গড়ে তুলে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
চাহিদা বাড়ায় ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিআইএফটি) চালু করে দক্ষ জনবল তৈরি করে পোশাক শিল্পে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। ইতিমধ্যে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে বিদেশি জনশক্তির স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে প্রতিনিয়ত তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়ন ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট ১০৬তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সিবিইউএফটির অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চারটি বিভাগ চালুর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দুইটি অনুষদে বিভক্ত এসব বিভাগ।
ক্লথিং ও ফ্যাশন টেকনোলজি অনুষদের অধীনে টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লথিং টেকনোলজি (টিসিটি) ও ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি (এফডিটি) বিভাগ থেকে বিএসসি কোর্স এবং ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল ডিজাইন অনুষদে অ্যাপারেল মার্সেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (এএমএম) ও ফ্যাশন ডিজাইন (এফডি) বিভাগ ব্যাচেলর ডিগ্রি দেওয়া হবে।
আগামী জুলাই-ডিসেম্বর সেশনে টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এফটিএমই) অনুষদ চালুর পরিকল্পনা আছে। এর অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (টিই) ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (টিইএম) বিভাগের বিএসসি ডিগ্রি নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
পোশাক কারখানায় বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যেত। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে, অন্যদিকে বেকারত্ব কমবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চার বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর গড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ পড়তে পারে। সিবিইউএফটিতে আন্তর্জাতিক মানের সব সুবিধাই পাবেন শিক্ষার্থীরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ক্লাসরুম, অত্যাধুনিক সুবিধার ল্যাবরেটরি, স্যুইং ল্যাব, টেক্সটাইল টেস্টিং ল্যাব, ফ্যাশন ডিজাইনিং স্টুডিও, উচ্চ ক্ষমতার ফ্রি ইন্টারনেট, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি থেকে শুরু করে বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ এবং প্রজেক্টর মাল্টিমিডিয়ার মতো শিক্ষা সহায়ক উপকরণ থাকবে। চট্টগ্রামের সেরা পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টার্নশিপের সুযোগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নামী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময়ের সুযোগও পাবেন। এ ছাড়া ভালো ফল করলে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ মিলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
এআর/পিডি/টিসি