চট্টগ্রাম: আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে পড়া শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে বদ্ধপরিকর সরকার।
এদিকে পদের চেয়ে অধিক শিক্ষক রয়েছে নগরের কলেজগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলতে পারে না। সবার প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। পার্বত্য জেলা আর দ্বীপের শিক্ষার্থীরা কেন শিক্ষক সংকটে ভুগবে? নগরের কলেজে কেন পদের একাধিক শিক্ষক থাকবেন? আমরা চাইবো, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যা যেন কর্তৃপক্ষ সমাধান করেন।
জানা গেছে, পার্বত্য জেলা রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ৭টি বিভাগে কোনও শিক্ষক নেই। সামনে ক্লাস শুরু হলে কিভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন যে শঙ্কায় রয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ এনামুল হক খন্দকার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক বছর ধরে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি, গণিত, ব্যবস্থাপনা ও ইতিহাস বিভাগ কোনও শিক্ষক নেই। আশা করেছিলাম ৪০তম বিসিএস থেকে পদায়ন হবে কিন্তু তাও হয়নি। কিভাবে ১ তারিখ ক্লাস শুরু করবো- দুশ্চিন্তায় আছি।
জেলার সবচেয়ে বড় কলেজ রাঙামাটি সরকারি কলেজ। যেখানে প্রায় ২ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু এ বিপুল শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলায় ১ জন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১ জন শিক্ষক আছেন। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগগুলোতে যে শিক্ষক সংখ্যা রয়েছে তাও অপ্রতুল।
এছাড়া বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগে কোনও শিক্ষক নেই। চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দীপের সরকারি হাজী এবি কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও আইসিটি বিষয়ে কোনও শিক্ষক নেই। শিক্ষক গেলেও এক মাসের মধ্যে নানান তদবির করে তারা শহরে চলে আসেন।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড় সরকারি কলেজে ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও আইসিটির কোনও শিক্ষক নেই। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়ে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমরা একাধিকবার জানিয়েছি। নিজেও কয়েক দফা ঢাকা গিয়েছি। কিন্তু এখনও সমাধান পাইনি। দ্রুত শিক্ষক না পেলে পাঠদান ব্যাহত হবে।
খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শাহ আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ইতিহাস ও রসায়ন বিভাগে কোনও শিক্ষক নেই, বাংলা ও ইংরেজিতে শিক্ষক সংকট আছে। শহর থেকে অতিথি শিক্ষক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করারও সুযোগ নেই। কারণ তারা এখানে আসতে চায় না। বাজেটের একটা বিরাট সমস্যা আছে।
পার্বত্য জেলা আর দ্বীপে এ অবস্থা হলেও চট্টগ্রাম শহরে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। চট্টগ্রাম শহরের কলেজগুলোতে প্রতিটি বিভাগে পদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষক কর্মরত। যারা বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন। অনেকে আবার ক্লাসের চেয়ে বেশি ব্যস্ত চকবাজারের কোচিং পাড়ায়।
নগরের চকবাজার এলাকায় গেলেই দেখা মিলবে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বাহারি সব বিজ্ঞাপনের। যারা নিজেরা কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। যেখানে একজন কয়েকটি ব্যাচ পড়ান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে।
চট্টগ্রাম কলেজে ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, গণিত ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়া সরকারি সিটি কলেজেও বাংলা, গণিত, হিসাববিজ্ঞান, রসায়ন ও প্রাণিবিদ্যায় পদের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। সরকারি কমার্স কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজেও একই অবস্থা।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, গ্রামের অনেক শিক্ষার্থীরা আছে যারা পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারকে সাহায্য করতে হয়। তাই গ্রামেই থাকতে হয়। কিন্তু সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ বিষয়ের শিক্ষক নেই। এ কলেজগুলোতে দ্রুত শিক্ষক পদায়ন করে শিক্ষাজীবন বাঁচাতে হবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. প্রদীপ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, যে কলেজগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেসব কলেজে শিক্ষক নিয়োগ হয়। কিন্তু তারা নানান তদবির করে আবারও শহরে চলে আসেন। ভৌত অবকাঠামোর কারণে সেখানে শিক্ষকরা থাকতে চান না। এরপরেও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সেখানে অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে শিক্ষকদের রাখার জন্য।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ বলেন, যেসব কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে সেসব কলেজে খুব শিগগির শিক্ষক পদায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
বিই/টিসি