ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাতারবাড়ী বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত: নৌ প্রতিমন্ত্রী

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২৩
মাতারবাড়ী বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত: নৌ প্রতিমন্ত্রী ছবি: বাংলানিউজ

মাতারবাড়ী থেকে: মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত বলে মন্তব্য করেছন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই কিন্তু এই মাতারবাড়ীকে বাংলাদেশের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন। তাবৎ দুনিয়া জানছে যে, বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে মাতারবাড়ী।

সেই মাতারবাড়ী চ্যানেল হয়ে গেছে, সেটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি স্থাপন করবেন। মাতারবাড়ী এখন দৃশ্যমান। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ, তিনি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাংলাদেশকে গভীর সমুদ্রবন্দর উপহার দিয়েছেন। এ বন্দর দেশের অর্থনীতিকে শুধু শক্তিশালী করবে না, মাতারবাড়ী প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বৈরিতা নয় একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সিম্বল হয়ে যাবে। এর সুবিধা আশপাশের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো নিতে পারবে। সিঙ্গাপুর-কলম্বো থেকে যে লাইটারিং করা হচ্ছে তা কমে যাবে। খরচ কমে যাবে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে চাঞ্চল্য বাড়বে।

তিনি বলেন, এ বন্দরকে ঘিরে সাংবাদিকরাই বলেছিলেন- এটি হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর। সেটির ভিত্তি স্থাপন হতে যাচ্ছে শনিবার।

তিনি জানান, মাতারবাড়ী পোর্ট ও রোড দুটো সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো বাধা নেই। টার্মিনাল ও রোড একই সময়ে দৃশ্যমান দেখবেন। কক্সবাজারে রেল যাবে কেউ ভাবেনি। এটা প্রধানমন্ত্রী ভেবেছেন। মাতারবাড়ীতেও রেললাইন যুক্ত হবে। মাল্টি মডার্ন কানেকটিভিটি করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বাস্তবে দেখিয়ে দিয়েছেন।

অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো কিছুই আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো রাষ্ট্রনায়ক যে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন সে দেশের মানুষ, সে দেশ কখনো সংকটে পড়বে না।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা এখানে বসবাস করেন। যারা এখানে ভূমি দিয়েছেন। যাদের ভূমির ওপর বন্দর হচ্ছে। যাদের একসময় লবণচাষই একমাত্র জীবিকা ছিল। এই যে একটা বিরাট কর্মযজ্ঞের কারণে এখানে বিশাল কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। এটি এ এলাকার জীবন মান পরিবর্তন করে দেবে। এখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শুধু কর্মসংস্থান নয়, মৌলিক অধিকার শিক্ষা, চিকিৎসা সব কিছুতে বন্দর থাকবে। চট্টগ্রামকে যেমন পোর্ট সিটি, বন্দরনগরী বলা হয়, এখন এটিকে বলা হবে বন্দরনগরী।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মেরিটাইম সেক্টরকে এমন উচ্চতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়ে গেলেন, আমরা এখন গর্ব করে বলতে পারি আমাদের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর আছে। এখন আলোর যুগ চলছে। এখন বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ নেই। এগুলো দমন করা হয়েছে। যেদিকে তাকাবেন অর্থনীতির গতি দেখতে পাবেন। বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছেন। উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্যমাত্রা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। এখন সময়টা আলোর। আলোর দিশারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের সঙ্গে আছেন। আমাদের কোনো কিছুই হবে না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আমাদের সঙ্গে আছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের মধ্যে রয়েছে। মাতারবাড়ী যে স্বপ্ন আমাদের দেখাচ্ছে এটি দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হবে। এটি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন ও প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি স্থাপন করবেন।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মাতারবাড়ীতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।  

কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বেশি গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ হ্যান্ডলিং করা যাবে। যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভ্যাসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে।  

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জেটি ও ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ এবং কনটেইনার ইয়ার্ডসহ বন্দর সুবিধাদি নির্মাণের কাজ হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন কাজ চলমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২৩ 
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।