ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আমরা বুদ্ধিজীবীদের মতো প্রতিবাদী না, কারণ আমাদের উপাচার্য হতে হবে’

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
‘আমরা বুদ্ধিজীবীদের মতো প্রতিবাদী না, কারণ আমাদের উপাচার্য হতে হবে’ ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: সৃজনশীল বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। আমরা সবাই হয়ে গেছি ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবী।

সৃজনশীল বুদ্ধিজীবীরা যেকোনও অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করেন। কিন্তু আজকে আপনারা প্রতিবাদ করেন না, কারণ আপনাদের কেউ উপাচার্য হবেন, কেউ উপ-উপাচার্য হবেন।
আমি এ কথাগুলো বলি দেখেই আমার কথায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনও খুশি হন না।  

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) উপাচার্য সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এসব কথা বলেন।

এর আগে সকাল ১০টায় বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।  

চবি এস্টেট শাখার প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামের সঞ্চালনায় বুদ্ধিজীবী স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ, প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, স্বাগত বক্তব্য দেন চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার, মুখ্য আলোচক ছিলেন চবি বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে।

মুখ্য আলোচকের বক্তৃতায় অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানিরা মনে করে বাঙালিরা সবাই পুরোপুরি মুসলমান নয়। তারা আমাদের পুরোপুরি পাকিস্তানি বলে মনে করতো না। তারা মনে করতো আমরা অর্ধেক বাঙালি, বাকি অর্ধেক হিন্দু। তাই আমাদের প্রমাণ দিতে হতো আমরা যে মুসলমান।

তিনি বলেন, আমি অনেককে দেখি ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বলে বক্তৃতা শুরু করে। আমরা তো কখনও বঙ্গবন্ধুকে এভাবে বক্তৃতা দিতে দেখিনি। এটা কেন করে জানেন? কারণ সবাই মুসলমান প্রমাণ করতে চায় নিজেকে। আমি মনে করি বাঙালিদের মুসলমান প্রমাণ করার দরকার নেই।

মুনতাসীর মামুন বলেন, কেন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলো? কারণ তারা মনে করেছিল বুদ্ধিজীবীদের মেরে ফেলা হলে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সকল আন্দোলন বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। অনেকেই মনে করে শুধুমাত্র ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। মূলত দীর্ঘ সময় দিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। আর সেটা শুধু মিরপুর বা রায়েরবাজারে না, পুরো দেশেই হত্যা করেছিল।

‘বুদ্ধিজীবীরা ভণ্ড ছিলেন না। তাই তারা মৃত্যুতে দ্বিধাহীন ছিলেন। অথচ আমরা এখনও বুদ্ধিজীবী হত্যার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারিনি। পৃথিবীর কোনো দেশে ছয়বার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের পুরো বিষয়টা অর্থের আবর্তে চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিট নষ্ট করা হচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীতে রাজাকারদের তালিকা হয়, বুদ্ধিজীবীদের তালিকা হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হওয়ার কোনো নজির নেই। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এত বছর ধরে আছে। অথচ তাদেরকে বলে-কয়েও ৩০ লাখ শহীদের তালিকা করতে পারিনি আমরা’।  

তিনি বলেন, ঐ সময়ের সরকার একটা মহৎ কাজ করেছিলেন। তা হলো- বিজয় দিবসের আগে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেছিলেন। আর কোনো দেশে বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে কোনো দিবস পালন করা হয় না। তাই আপনাদের কাছে আহ্বান থাকবে সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী হবেন, ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবী না।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, পাকিস্তানিরা মনে করতো বাঙালিরা ভারতের চর। আমাদেরকে তারা মুসলমানও মনে করতো না। আমরা বুদ্ধিজীবী বলতে মনে করতাম শিক্ষকদের, যারা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন, লেখালেখি করতেন। তারা লুকিয়ে ছিলেন। তাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছিল রাজাকাররা। যেভাবে বুদ্ধিজীবীরা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা এদেশের মানুষ সবসময় মনে রাখবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
এমএ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।